উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার সিদল। কেউ কেউ বলে থাকেন ‘অমৃত’ আবার কেউ নাম শুনলেই নাক সিঁটকোন, আবার হয়ত কেউ কেউ নামই শোনেনি। এই জনপ্রিয় খাবার নাকি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। কী এই সিদল? কীভাবে বানায়? এর সঙ্গে যোগ আছে ঐতিহ্য এবং ইতিহাসেরও।
সিদল আসলে কী ?
মলা, পুঁটি, টাকি ইত্যাদি ছোট মাছের শুঁটকির সঙ্গে কচু বা মানকচুর ডাঁটা মিশিয়ে সিদল তৈরি করা হয়। মূলত বাঙালিদের খাবার হিসেবেই এই পদ জনপ্রিয়।
ভৌগলিক অবস্থান
সিদল মূলত বাংলাদেশের মানুষরা খেয়ে থাকেন, এছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর, মেঘালয়ে সিদল খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার লোকেদের কাছে সিদল আজও নস্টালজিয়া।
কীভাবে তৈরি হয় সিদল, কবে থেকে এর প্রচলন ?
নদীমাতৃক জনগোষ্ঠীদের সৃষ্টি এই সিদল। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। মনে করা হয় তিস্তা নদীর তীরে বসবাসকারী জনজাতি এই খাবার খেতেন। নদীর পাশে প্রচুর পরিমাণে কুচো মাছ উঠত। যা রান্না করা বেশ ঝক্কির, আরও ঝক্কির বাছা। সেই সময় এই মাছ তুলে ভাল করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নেওয়া হত।
এরপর ওই শুকিয়ে যাওয়া মাছ গুঁড়ো করে ফেলা হয়। অন্যদিকে, সবচেয়ে সহজলভ্য় কচুর ডাটা তুলে এনে ভাল করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাও বেটে নেওয়া হয়। এবার এর সঙ্গে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা, মরিচ গুঁড়ো, ধনে এবং জিরে গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেখে , হাতের সাহায্যে চ্যাপটা চ্যাপটা মণ্ড তৈরি করে নিন। সেই মণ্ড রোদে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হবে সিদল। এই সিদল কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করা যায় টানা ১ বছর।
হারিয়ে যাচ্ছে স্বাদ
কিন্তু এখন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে সিদলের স্বাদ। এর একটি বড় কারণ হল নদী ও জলাশয়ে মোয়া, টাকি, পুঁটি মাছ কমে আসছে। এবং সিদল বানানো বেশ পরিশ্রমেরও, নতুন প্রজন্মও তাই ঝুঁকছে ফার্স্টফুডে। কিন্তু যাঁরা এই ঐতিহ্যবাহী খাবার একবারও চেখে দেখেননি, তাঁরা একটিবার চেখে দেখতেই পারেন।