ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলানো আর মানুষটার আত্মহত্যার মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টা! রবিবার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ফসিলস-এর প্রাক্তন বেস গিটারিস্ট চন্দ্রমৌলি বিশ্বাসের আত্মহত্যার ঘটনায়।
ওয়েলিংটনের ভাড়া বাড়ি থেকে ৪৮ বছরের শিল্পীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। চন্দ্রমৌলি পেশাগত অবসাদে ভুগছিলেন, এবং সেই অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বাংলা বিনোদন জগতে আত্মহত্যার ঘটনা, এই প্রথম, এমনটা নয়। আত্মঘাতী শিল্পীর ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে সুইসাইড নোট। অধিকাংশ সুইসাইড নোটের মতোই তাতে লেখা ছিল 'আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়'। সব আলোচনা শেষ হয়ে যেতে পারত চন্দ্রমৌলির ছবি সহ RIP দেওয়া কিছু পোস্টেই। কিন্তু সেরকমটা হয়নি। হয়নি, কারণ চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস এই নামটার সঙ্গে নয়ের দশকে শৈশব-কৈশোর কাটানো বিপুল সংখ্যক বাঙালির আবেগ জড়িয়ে। গিটার হাতে চন্দ্রমৌলিকে দেখে কত তরুণ তরুণী স্বপ্ন দেখেছিল ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে কেরিয়ার গড়ার, জেনেছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়রিং পাশ করেও নিশ্চিত ব্রাইট কেরিয়ারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্যাশনকেই পেশা করা যায়।
২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফসিলস-এর অন্যতম বেসিস্ট চন্দ্রমৌলির আত্মহত্যা ভাবিয়ে তুলেছে বাংলা বিনোদন জগতের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রচুর মানুষকে। গ্ল্যামার দুনিয়ার ওপরের চাকচিক্যের আড়ালে ঢাকা থাকা চরম নিষ্ঠুর সত্যিগুলো বেরিয়ে পড়ছে আবার। বহু শিল্পী বা শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চাওয়া মানুষ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চন্দ্রমৌলির আত্মহত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিনোদন দুনিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ অনিশ্চয়তা, অবসাদ, উদ্বেগ, শেষ মুহূর্তে কাজ চলে যাওয়া, দীর্ঘদিন কাজ না পাওয়ার মতো ঘটনা।
একের পর এক ফেসবুক পোস্টে উঠে আসছে, আধুনিকন এবং চূড়ান্ত কম্পিটেটিভ দুনিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্য কতোটা বিপন্ন। কেউ নিজেদের অবসাদের কথা বলে উঠতে পারছেন না। কেউ প্রথম প্রথম বলছেন, তারপর গুরুত্ব হারাচ্ছেন। কারোর কারোর হাত ছেড়ে দিচ্ছি আমরাই। ডিপ্রেশন নর্মালাইজ হয়ে যাচ্ছে? মেন্টাল হেলথ নিয়ে এত আলোচনা, এত ক্যাম্পেন, এত প্রচারের পরেও 'মন ভাল নেই' এতটুকু শোনার মতো একটা দু'টো মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না এই শহরে?