ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার কনের বিগ ফ্যাট ওয়েডিং বলে কথা। ব্রাইডাল লুক যে পারফেক্ট হবে, এ আর নতুন কী? বাড়তি কিছু নেই? আলবাত আছে। ডি ডেতে লাল ল্যহেঙ্গার সঙ্গে সোনা-পান্নার গয়না পরে চোখ ধাঁধানো সাজ সেজেছেন কনে। চুল খুলে রেখেছেন? নাকি খোঁপা করেছেন? নাহ সে সব কিছুই নয়! কনের মাথায় চুল নেই। কম চুল নয়, চুল একেবারেই নেই। কী দিয়ে ঢেকেছেন তা? ঢাকেনও নি। বরং বলা ভাল, বল্ড লুক-ই ফ্লন্ট করেছেন! গত দিন কয়েক ধরে সেই ছবি-ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজ বলব সেই সেনসেশনাল ব্রাইডের আসল গল্প।
কে নিহার সাচদেবা। মাথায় চুল সত্যিই নেই? একটুও নেই? নাকি পুরোটাই মেকআপ করেছেন? ভাইরাল হতে চেয়েই কি বিয়ের দিনে আলাদা লুক! নিহার সাচদেবা মার্কিন প্রবাসী ভারতীয় হলেও বিয়ের দিনে বেছে নিয়েছিলেন আদ্য পান্ত ভারতীয় সাজ। সিঁদুরে লাল ল্যাহেঙ্গা পরেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। কিন্তু চুলের বেলা কী হলো? কনেসুলভ সাজ কোথায় গেল? খোঁপা না করুন, অন্তত আলিয়া ভাটের মতো খোলা চুলেই বিয়েতে বসতে পারতেন তো। তা না! একেবারে ন্যাড়া মাথায় বিয়ে! নীহারের মাথায় চুল নেই। কেন নেই? নীহারের অ্যালোপেশিয়া রয়েছে। কবে থেকে? যখন ছ মাস বয়স, তখন থেকেই।
অ্যালোপেশিয়া এক ধরনের অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, যেখানে হেয়ার ফলিকল নষ্ট হয়ে চুল ঝরে যায়, নতুন চুল গজায় না। এই অবস্থার সঙ্গে নীহার সাচদেবার পরিচয় আজকের নয়। তবে প্রথম দিকে অ্যালোপেশিয়া ঢেকে রাখতে নীহার পরচুলা বা উইগ। তবে, বিয়ের অনেক আগে থেকেই কনে উইগ পরা ছেড়ে দিয়েছেন।
কোন বয়সে কোন রং মানায়? কোথায় গেলে পোশাকের দৈর্ঘ্য কতটা হবে, কোথায় শাড়ি পরবেন, কোথায় শর্টস, বিয়ের দিনে শাড়ি না ল্যাহেঙ্গা পরতে হবে, সেসব বিচার করার জন্য ফ্যাশন পুলিশেরা সদা মুখিয়ে থাকেন। মেয়েদের সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অলিখিত শর্তই থাকে লম্বা, ঘন চুল, দৈর্ঘ্যে কনের হাঁটু ছাড়ালে ভাল। সে সবকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন নীহার। বিয়ের দিনে লাজে রাঙা হননি, বরং সব সাজ, সব গয়নার চমক ফিকে হয়ে গেছে তাঁর আত্মবিশ্বাসে। সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকে সমাজের স্কেলে মাপার প্রয়োজন মনে করেননি কনে। বরং, নিজে ঠিক যেমন, সেটাকেই উদযাপন করেছেন নীহার সাচদেবা। উদযাপন করেছেন, তাঁর লম্বা সময়ের প্রেমিক অরুণাভ গনপতি, এবং নীহার-অরুণাভের পরিবার।
শুধু নিজের বিশেষ দিনেই ছক ভাঙ্গেননি নীহার। কারণ, তিনি জানেন স্টিরিওটাইপ, একদিন ভেঙে শুধু শিরোনামে আসা যায়, ভাইরাল হওয়া যায়। সমাজ বদলাতে সময় লাগে অনেকদিন, লাগে ধৈর্য। #TheBaldBrownBride নামের একটি প্রচার তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন বছর তিনেকের বেশি সময় ধরে। এডিটরজি বাংলার পক্ষ থেকে নীহার এবং নীহারের মতো সব ছক ভাঙাদের লড়াইকে কুর্নিশ।