যতদিন আর্ট বা শিল্প আছে, ততদিন বিতর্কও আছে । শিল্প বা আর্ট আপনাকে প্ররোচনা দিতে পারে, নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলতে পারে । কিন্তু, শিল্পের মাধ্যমে প্ররোচিত করা ও সমস্যা তৈরি করার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখাচিহ্ন আছে । অন্তত, সেরকমই মনে করেন নেটিজেনরা ।
বর্তমানে বিভিন্ন ফটোশুট নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে । সম্প্রতি,ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কার ফটোশুটের কয়েকটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে । বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগের (Vogue) ডিজিটাল কভারের জন্য তাঁরা ছবি তুলেছেন । এদিকে, লাগাতার যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ । প্রচুর মানুষের প্রাণহানি হয়েছে । তার মাঝে জেলেনস্কি দম্পতির ফটোশুট নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তাঁরা । ফটোশুটের সময়, প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন ।
ভারতেও এমন কিছু ফটোশুট হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়নের মধ্যে একটা দূরত্ব রয়েছে । ২০১২ সাল । নির্ভয়া কাণ্ড । দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনায় তখন তপ্ত দেশ । ২০১৪ সাল । মুম্বইয়ের ফ্যাশন ফটোগ্রাফার রাজ শেঠে একটি ফটো সিরিজ বের করেন, যার নাম দ্য রং টার্ন । যেখান দেখা গিয়েছে, একটি বাসে এক মহিলাকে ঘিরে রয়েছে কয়েকজন ব্যক্তি । এই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন । অনেকেই মনে করেছেন,এই ফটোশুটের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নকে প্ররোচিত করার অভিযোগ ওঠে ওই ফ্যাশন ডিজাইনারের বিরুদ্ধে । এরকম সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে ফটোশুট করা একেবারেই উচিৎ হয়নি বলে মনে করেছেন অনেকে ।
প্রায় তিন বছর আগে ফিল্মফেয়ার ম্যাগজিনের ফটোশ্যুটের জন্য নেটিজেনদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল হতে হয়েছিল সারা আলি খানকে । কেনিয়ার মাসাইমারা ন্যাশনাল পার্কে ফটোশুট করেছিলেন সারা । সেই সময় সারার পিছনে বেশ কয়েকজন মাসাইমারা উপজাতির পুরুষ ও মহিলাকে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হয়েছিল । সেই ছবি দেখে অধিকাংশ নেটিজেনদের অভিযোগ ছিল, এখানে মাসাইমারা উপজাতির মানুষকে ফটোশুটের জন্য সামগ্রীর (props) মতো ব্যবহার করা হয়েছে । অনেকের অভিযোগ, এই ফটোশুটের মাধ্যমে বর্ণবৈষম্যর দিকটি দেখানো হয়েছে ।
২০১৯-এর ব্র্যান্ড র ম্যাঙ্গো-র কালেকশন জুনি-র প্রমোশোনার ফটোশুট সমস্যা তৈরি করেছিল, বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল । ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি পোশাকের মডেলকে দেখা গিয়েছে তাদের প্রোমোশনাল ছবিতে । কাশ্মীরের ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ফটোশুট করা হয় । তবে অনেকের অভিযোগ,একেবারেই ভুল সময়ে এই প্রোমোশনাল শুট করা হয়েছে । যা একটি কঠিন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ ও কঠিন করে তুলেছে।
আর্ট বা শিল্প জীবন এবং বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে । কিন্তু কোনও পর্যায়ে শিল্প কি সহানুভূতি ও সংবেদনশীলতার সীমারেখা অতিক্রম করে যায় ? এটা আমরা আপনাদের বিচারের উপরেই আমরা ছেড়ে দিলাম ।