বলিউডে তখন খানেদের র্যাঙ্কিং আসেনি। আসলে খানেরাই আসেননি। তিনিই প্রথম খান। ইউসুফ খান। সদ্য প্রয়াত দিলীপ কুমার। তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে বড় তারকা।
ভারতীয় সিনেমায় মেথড অ্যাক্টিং প্রথম এল দিলীপ কুমারের হাত ধরেই।
১৯২২-এ জন্ম ইউসুফ খানের, অধুনা পাকিস্তানের পেশোয়ারে। রাজ কাপুরের সঙ্গেই বেড়ে ওঠা শৈশবের দিনগুলোয়। ১৯৪০-এ, কইশর থেকে যখন সবে পা বাড়িয়েছেন তারুণ্যে, বাবার সঙ্গে মনোমালিন্যের পর ঘর ছাড়লেন ইউসুফ। চলে এলেন পুনায়। আর্মি ক্লাবে স্যান্ডউইচ বিক্রি করে শুরু হল দিন গুজরান। কয়েক বছর পর গেলেন এখনকার মুম্বই, তখন জার নাম বম্বে। যোগ দিলেন বম্বে টকিজ-এ। সেখানেই আলাপ অশোক কুমারের সঙ্গে। প্রথম জীবনে দিলীপ কুমারের অভিনয়েও প্রভাব ছিল অশোক কুমারের। তখনও দিলীপ হননি, তখনও তিনি ইউসুফ। এবার 'জ্বর ভাতা' নামের ছবিতে একেবারে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এল দেবীকা রানীর কাছ থেকে। সঙ্গে একটা অনুরোধ, ইউসুফ থেকে হতে হবে দিলীপ কুমার। সেটা ১৯৪৪।
সেই শুরু। একের পর এক মাইলফলক ছোঁয়া। মেথড অ্যাক্টিং হয়ে উঠল তাঁর নিজস্ব স্টাইল। আরেক কিংবদন্তি সত্যজিতের কথায়, মেথড অ্যাক্টিং-এর শেষ কথা দিলীপ কুমার।
পাঁচের দশকে সদ্য প্রয়াত অভিনেতার ফিল্মি পথ চলা শুরু শরিয়ত, বাবুল, তারানা, হালচাল, দিদার, দাগ, উড়ান, দেবদাস, কুমাটি-র মতো ছবি দিয়ে। ১৯৬০-এ এল মুঘলে আজম। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ততদিনে পাকাপাকি ভাবে লেখা হয়ে গিয়েছে দিলীপ কুমারের নাম।
ভারতীয় সিনেমার আইকনিক কিছু চরিত্রের সঙ্গে সমার্থক হয়ে আছে দিলীপ কুমারের নাম। তাঁর অভিনীত নয়া দৌর, মুঘলে আজম, দেবদাস, রাম অউর শ্যাম, মধুমতী, গঙ্গা যমুনা, আন্দাজ, বলিউডের এক একটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে। আটের দশকে মুক্তি পায় দিলীপ কুমার অভিনীত শক্তি, কর্মা। সেখানেও তাঁর অভিনয় দক্ষতা বহু চর্চিত। ১৯৯৮-এ 'কিলা'-ই দিলীপ কুমার ওরফে ইউসুফ খানের শেষ ছবি। বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী মধুবালা, বৈজয়ন্তীমালা, নার্গিস, মিনা কুমারী, সকলের সঙ্গেই জুটি বেঁধে একাধিক সাড়া জাগানো হিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছেন দিলীপ কুমার।
১৯৬৬ টিতে অভিনেতা বিয়ে করেন ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একসঙ্গেই পথ চললেন দিলীপ-সায়রা।
চলচ্চিত্র জীবনে ৮ বার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার খেতাব জেতার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর।
হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য সদ্য প্রয়াত অভিনেতা নানা সময়ে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পদ্ম ভূষণ, পদ্ম বিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সম্মান নিশান-ই-ইমতিয়াজ-এও সম্মানিত এই কিংবদন্তি অভিনেতা। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি যুগের অবসান হল। শুধু চলচ্চিত্রই বা কেন, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গোটা একটা সময়কে নিয়ে চলে গেলেন দিলীপ কুমার।