ঘণ্টা খানেকের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছ ভেঙে একাধিক রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চলছে প্রবল বৃষ্টি। একাধিক নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বহু এলাকায় জল জমেছে।যদিও হতাহতের কোনও খবর নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বৃহস্পতিবার রাতে আছড়ে পড়ে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরার মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ে। সেইসময় তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। তারপর ধীরে ধীরে সেটি উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
IMD-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র। তারপর সেটি অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাবে প্রায় গোটা ওড়িশাজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এর জেরে একাধিক নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেযেছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।
ওড়িশা IMD-র তরফে ২৫ অক্টোবর বিকেল ৩টে ৪৫-এ একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয় বেলা আড়াইটে নাগাদ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায ৫৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার। যেহেতু এটি একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে সেই কারণে আগামী ১২ ঘণ্টায় টানা বৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র দাপটে ভেঙে পড়েছে প্রচুর গাছ। ভিতরকণিকার সমুদ্র তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর গাছ পড়ে যাওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঝড়ের ফলে কয়েকটি বিদ্যুৎ-এর খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তার-ও ছিঁড়ে পড়েছে। তার মধ্যে ইন্টারনেট সংয়োগের তারও রয়েছে। ফলে কয়েকটি এলাকার ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। সেই কারণে তথ্য আদানপ্রদানেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।
শুধু গাছ বা বিদ্যুৎ-এর খুঁটি নয়, ঝড়ের প্রভাবে একাধিক কাঁচাবাড়িও ভেঙে গিয়েছে। জল ঢুকে গিয়েছে বহু এলাকায়। উপকূলবর্তী এলাকার অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় সমুদ্র ছিল উত্তাল। সেই কারণে বসতি অঞ্চলে জল ঢুকে গিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। গাছ সরানোর পাশাপাশি দ্রুত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে চালু করা যায় তার জন্য যুদ্ধকালীন তপরতায় কাজ করছেন।
IMD -র দেওয়া ওই বুলেটিনে আরও জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা আড়াইটে পর্যন্ত সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ওড়িশার চাঁদবালিতে। সেখানে ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৯৪.১ মিলিমিটার এবং বালাসোরে বৃষ্টির পরিমাণ ৫২ মিলিমিটার।
IMD-র প্রথমের দিকে পূর্বাভাস ছিল শুধু ওড়িশা নয, ‘দানা’-র প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। প্রস্তুতি নিয়েছিল রাজ্য সরকারও। কিন্তু দানা-র ঝড় থেকে পুরোপুরিভাবে রক্ষা পেল বঙ্গ। কারণ ল্যান্ডফল করার পর অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার দিকে মুখ করে এগোতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়।
পশ্চিমবঙ্গে ঝড় না হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই পরগনা, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান সহ একাধিক জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় মুষলধারে। IMD -র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা আড়াইটে পর্যন্ত ডাযমন্ডহারবারে বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার। কলকাতায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০.১ মিলিমিটার, দমদমে বৃষ্টিপাত হযেছে ৫৬ মিলিমিটার এবং সল্টলেকে বৃষ্টির পরিমাণ ৫১ মিলিমিটার। Zoom earth-এর দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী শনিবারও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হবে। তবে রবিবার থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদল হবে।
‘দানা’-র প্রভাবে ওড়িশায় কারোর মৃত্যু না হলেও এই রাজ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি হাওড়া, হুগলিতে ধান জমিতে জল জমে যাওয়ার ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।