জীববৈচিত্র্য়ে কালের করাল গ্রাস। জলবায়ু পরিবর্তন ও বাস্তুতন্ত্রের নিয়মে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক প্রজাতি। অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে কত উদ্ভিদ,কীটপতঙ্গ, পশুপাখির। প্রকৃতির নিয়মকে তাও প্রত্যেক মুহূর্তে বদলে দিয়ে শাসন করছে সভ্যতা। পরিসংখ্য়ান বলছে, গত ২০০ বছরে কমপক্ষে ৩০০-এর বেশি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক ১০ বছরে গড়ে ২৫টি জৈব উপাদান এই প্রকৃতির কোল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায়, বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
২০২২ সাল। ২ বছর আগে লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে কেন্দ্র। ওই রিপোর্টে জানানো হয়, দেশের ৭৩টি প্রজাতি ভয়ঙ্করভাবে বিপন্ন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার-এ রিপোর্ট উল্লেখ করে কেন্দ্র। এই তালিকায় ছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড প্রজাতির এক পাখি। এবার হারিয়ে যাওয়া এই বাস্টার্ড প্রজাতির পাখির কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের সাহায্যে বংশবৃদ্ধি সম্ভব হল জয়সলমীরের সুদাসারি ডেসার্ট ন্যাশনাল পার্কে।
জলজ নয়, স্থলভাগেই বাস গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের। লম্বা ঘাড়, পা-ও বেশ লম্বাই হয় এদের। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, একমাত্র ভারতে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। তবে দেশে তাদের সংখ্যা এখন ১৫০। আগে রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, ছত্তিশগড়, ওড়িশাতে দেখা যেত এই প্রজাতি। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশেও পাওয়া যেত গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড। তবে দেশে বৈদ্যুতিক সংযোগ বৃদ্ধির পরই এদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। গত ৩০ বছরে রেকর্ড হারে কমেছে এই প্রজাতির পাখি। বর্তমানে যে ১৫০ প্রজাতির পাখি বেঁচে আছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আছে রাজস্থানে।
১৯৩৯ সালে, পরাধীন ভারতে প্রথম প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম প্রজনন হয়। চেন্নাইয়ের একটি ডেয়ারি ফার্ম প্রথম কৃত্রিম প্রজনন করে। এরপরই বিভিন্ন ক্ষেত্রেই কৃত্রিম প্রজনন হয়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, বিভিন্ন প্রজাতির হাতি, ওষুধি উদ্ভিদ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন করে সংরক্ষণ শুরু করেছে বনমন্ত্রক। গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড প্রজাতিকে বাঁচানোর জন্য এক দল গবেষক আবু ধাবি যান। কীভাবে সঠিক উপায় এই প্রজাতির প্রজনন সম্ভব, তা শিখে আসে ওই দল। এই কাজে ব্যবহার করা হয় ইন্টান্যাশনাল ফান্ড হওবারা কনজার্ভেশনকেও। এরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করে।
একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, ভারতে ওভারহেডের তারে শক খেয়ে প্রতি বছর ৮৪ হাজার পাখির মৃত্যু হয়। গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড প্রজাতি এর মধ্যে অন্যতম। তাই এরা এখন বিপন্ন প্রজাতি। রাজস্থানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রধান প্রবীন কুমার জানিয়েছেন, "গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড সংরক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আবু ধাবিতে গিয়ে কৃত্রিম প্রজননের সব খুঁটিনাটি জেনে এসেছেন গবেষকদের একটি দল। এখানে এসে তা ব্যবহার করেছেন তাঁরা।"