‘হাম হোঙ্গে কাঙ্গাল, হাম হোঙ্গে কাঙ্গাল একদিন…মনমে অন্ধবিশ্বাস দেশ কা সত্যান্যাস, হাম হোঙ্গে কাঙ্গাল একদিন’
We shall over come-এর এই প্যারোডি গেয়ে এই মুহূর্তে বিতর্কের রোষানলে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান কুণাল কামরা। বরাবরই তাঁর কৌতুকের বিষয় আর সকলের থেকে একটু আলাদা। তাঁর শো-এ মোদি সরকার ও ভারতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কড়া সমালোচনা থাকেই। খানিক বুক ঠুকেই, সংবিধানে হাত রেখে হাসি মজার ছলে বেশ কিছু ‘অপ্রিয় সত্যি’ কথা বলে ফেলাই কি কাল হল কুণালের?
সম্প্রতি কুণাল ‘নয়া ভারত’ নামের একটি শোতে কারও নাম না ‘গদ্দার’ শব্দবন্ধটি উচ্চারণ করেন। তাঁর গোটা শো-তেই বর্তমান সমাজ, রাজনীতি, ট্রেন্ড নিয়ে মিঠেকড়া কৌতুকরস ছিল। কিন্তু তাঁর প্যারোডির ওই একটা শব্দেই কার্যত আগুন জ্বলে গিয়েছে গোটা দেশেই। শিন্ডেসেনাদের অভিযোগ এই কৌতুক একনাথকে কেন্দ্র করেই।
শিন্ডের নাম একটিবারও উচ্চারণ করেননি কুণাল। কিন্তু চেহারার বর্ণনা, রাজনীতিতে অবস্থান বদলের মতো খোঁচা স্পষ্টতই যে একনাথকে উদ্দেশ্য করে তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি শিন্ডেসেনার।
ক্ষোভে মুম্বাইয়ের হ্যাবিট্যাট কমেডি ক্লাবে ভাঙচুর চালায় শিন্ডেসেনারা। শিবসেনার যুব নেতা রাহুল কানালের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন সমর্থক এই হামলা চালায়। কুণালের বিরুদ্ধে দায়ের হয় মানহানির মামলা। কৌতুকশিল্পীকে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমনও পাঠিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় কুণাল। সরকারি রোষানলে যখন তিনি দগ্ধ, দেশের বিরাট অংশের মানুষ এসে জুটেছেন তাঁর পাশে। তাঁর সাহসী মন্তব্যের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। তবে এসবের ঊর্ধ্বে একের পর এক হুমকি ফোন পেয়ে চলেছেন কুণাল। প্রায় ৫০০ টি ফোন এসেছে তাঁর কাছে। সব ফোনে প্রায় একটাই থ্রেট, ‘টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে’! বাইরে বেরোলেই তাঁকে মারধর করা হবে এমন হুমকিও লাগাতার পেয়ে চলেছেন কমেডিয়ান।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস কামরার মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, "আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করি, কিন্তু বেপরোয়া আচরণ সহ্য করা হবে না।" তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কুণাল জানিয়েছেন, তিনি কোনোওরকমভাবে ক্ষমা চাইবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, আইনি পথে পুলিশকে সমস্তরকম সহায়তা তিনি করবেন।
এরপরেই সারাদেশব্যাপী একটাই প্রশ্ন ঘুরছে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তো ‘FREEDOM OF SPEECH’ বা বাকস্বাধীনতা। এর আগেও একাধিক কমেডিয়ান রাষ্ট্রের রক্তচক্ষুর প্রকোপে পড়েছেন। এই ঘটনা ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক কমেডির সীমা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।