অন্যান্য সময় তাঁরা অদৃশ্য থাকেন, অথচ এই মহাকুম্ভের অলঙ্কার হলেন নাগা সাধু-সন্ন্যাসীরা। তাঁদের কঠিন তপস্যার কাহিনি, জীবন যাপন, চর্চা এবং চর্যা অলৌকিক এবং হাজারো রহস্যে মোড়া। বিশেষ করে মহিলা নাগা সাধুদের জীবন যেন আরও বড় এক বিস্ময়। মহাকুম্ভে পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের পাশাপাশি, পুণ্যার্জনে অগণিত মহিলা সাধ্বীরাও এসেছেন। সারা গায়ে ভস্ম মাখা, মাথায় জটা, কপালে তিলক- মহাকুম্ভে নজর কাড়ছেন এমন অনেক সন্ন্যাসিনীরাই। এই প্রতিবেদনে আমাদের আলো থাকবে তাঁদের উপরেই।
সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা অনুযায়ী, লজ্জা নারীর ভূষণ। কিন্তু মহিলাদের নাগা সন্ন্যাসী হতে গেলে কি নগ্ন হতে হয়? কতটা কঠিন হয় তাঁদের তপস্যা? কী কী আত্মত্যাগ করতে হয় তাঁদের? একজন সাধারণ মহিলা থেকে নাগা সাধু হওয়ার পথ কেমন?
মহিলা নাগা সাধুরা সাধারণত বিভিন্ন আখড়ার অন্তর্ভুক্ত হন। এই আখড়াতেই শত শত বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সন্ন্যাস জীবনের। কেন কোনও সাধারণ মহিলা সন্ন্যাসের পথ বেছে নেন? যদিও এর উত্তর দেওয়া খানিক কঠিন। কারণ জীবনের প্রথমাংশ থেকে শিক্ষা নিয়ে নানা কারণে এই পথ বেছে নেন মহিলারা। এর মধ্যে, সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল সংসার থেকে মুক্তি লাভের আশা। অনেকে সংসারে অত্যাচারিত হয়ে ঈশ্বর চেতনায় উৎসর্গ করেন নিজেদের জীবন। কেউ বা আধ্যাত্মিক আকর্ষণ থেকেই বেছে নেন সন্ন্যাস জীবন।
তবে নাগা সাধু হয় মানেই, কেবল সংসার ছাড়া নয়। এই পথ গভীর সাধনার, এবং তপস্যার। এই পথে যাঁরা একবার পা বাড়ান তখন আর ফিরে যাওয়ার পথ থাকে না।
কোনও মহিলা নাগা সাধু হতে গেলে কী কী নিয়ম মানতে হয়?
পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ:
কোনও মহিলা নাগা সাধু হতে গেলে প্রথমেই তাঁকে কোনও এক মঠ বা আখড়ায় প্রবেশ করতে হবে। প্রথমে তাঁদের পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা করা হয়। সংসার ধর্ম ছেড়ে তাঁরা থাকতে পারছেন কী না।
ব্রহ্মচর্য জীবন:
এর পরের ধাপ হল ব্রহ্মচর্য জীবন। মহিলাদের কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর ব্রহ্মচর্য জীবন পালন করতে হয়। আর এই সময় তাঁদের কঠিন নিয়ম মেনে চলতে হয়।
যেমন দিনে মাত্র একবার আহার গ্রহণ করা যায়, তাও নিরামিষ। কোনও স্বপ্ন দেখা ও পার্থিব চাহিদা রাখা নিষিদ্ধ। পরিবার পরিজনের ভাবনা মাথাতে আনাও নিষিদ্ধ। শারীরিক আরাম আয়েশ পুরোপুরি ত্যাগ করতে হয়।
নিজেকে মৃত বলে ঘোষণা:
এই পর্যায় সবচেয়ে কঠিন এবং আবেগপ্রবণ। কারণ এই পর্যায়ে পরিবারের কাছে নিজেদের আনুষ্ঠানিক ভাবে মৃত ঘোষণা করতে হয়। এই সময় নিজেকেই নিজের পিণ্ড দান করতে হয়। মুছে ফেলতে হয় অতীত জীবন।
নাম পরিবর্তন:
এরপর আখড়ার নিয়ম অনুযায়ী নাম পরিবর্তন করতে হয়। এই পর্যায় থেকে তাঁর নতুন পরিচয় হয় একজন সন্ন্যাসী হিসাবে।
লিঙ্গ নিরপেক্ষতা:
সন্ন্যাস জীবনের এই ধাপটিও বেশ কঠিন। এই পর্যায়ে একজন সন্ন্যাসীকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ হয়ে উঠতে হয়। কাম, শারীরিক আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হয়। এটি এক গভীর মেডিটেশন এবং মানসিক শক্তির মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কিছু আখড়ায় বলা হয় এই পর্যায়ে মানবিক শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সাধনার মাধ্যমে।
‘মা’ সম্বোধন:
নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ায় পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের সমকক্ষই মহিলারা। তাঁদের সকলে ডাকেন মা বলে।
সেলাইহীন বস্ত্র:
তবে নাগা সন্ন্যাসিনীদের ক্ষেত্রে নগ্ন হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। মহিলা সাধুরা মূলত ‘গান্টি’ (ঢিলেঢালা গেরুয়া বসন) পোশাক পরেন। যেই বস্ত্র হয় সেলাইহীন।
উল্লেখ্য, প্রয়াগরাজে এই মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা। এই মহাকুম্ভ মেলাকে সভ্যতার সবচেয়ে বড় জনসমাগম বলে উল্লেখ করছেন আয়োজকরা। মহাকুম্ভ মেলার আয়োজনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। এই বিরাট মহাযজ্ঞের পরম্পরা, নিয়ম কানুনের দিকে নজর থাকবে আমাদের। সমস্ত আপডেট পেতে চোখ রাখুন এডিটরজি বাংলায়।