ইশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। নামটুকুই যথেষ্ট। ভারতীয় মন, সঙ্গে ইওরোপিয় মনীষা, এই-ই ছিল সম্বল। তাই নিয়ে কত অন্যায়, কত অশিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি একা। বাঙালি জাতি তাঁকে শতাব্দীর পর শতাব্দী মনে রাখবে 'বিদ্যাসাগর' বলে। দুর্জয় সাহস, অদম্য পরিশ্রম আর সুতীক্ষ্ণ মেধাকে সম্বল করে যে মানুষটা বাংলার সমাজকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। যতবার অন্ধকার সময় এসে ঘিরে ধরে আমাদের, ততোবার আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন বিদ্যাসাগর।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইকন শুধুই পণ্ডিত নন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের জাল ছিন্ন করে প্রবর্তন করলেন বিধবা বিবাহের৷ লিখলেন বর্ণপরিচয়, অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বয়ের করে আনলেন মেয়েদের। দেড় শতক আগে এ দেশের এক মানুষ যেভাবে লিঙ্গ সাম্যর জন্য লড়েছেন, সেই লড়াই এখনও জারি। দেড়শ বছর পরেও বাংলায়, এই দেশে মেয়েরা নামেই অর্ধেক আকাশ। বাস্তবে মেয়েদের জন্য লড়াইটা এখনও অসম, পথ এখনও অমসৃণ। নারী স্বাধীনতা এখনও এক মিথ। বিদ্যাসাগর শিখিয়ে গিয়েছেন, পাশে কেউ যদি নাও থাকে, একা লড়তে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হয়, শেষ দিন পর্যন্ত।
মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামের ছেলে বাবার হাত ধরে চলে এসেছিলেন এই শহর কলকাতায়। তাঁকে নিয়ে কত মিথ! কেউ বলেন মাইলফলক দেখে শিখে নিয়েছিলেন ইংরেজি সংখ্যা, সাঁতরে পার হয়েছিলেন দুরন্ত দামোদর। ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে হয়ে উঠলেন পণ্ডিত।
বাংলা ভাষার জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। ব্রিটিশ ভারতে বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য লড়ে গেছেন ঈশ্বরচন্দ্র। একের পর আঘাত এসেছে পরিবারে। পাশে দাঁড়াননি কোনও ভাই বা বন্ধু। প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যেও বাংলা ভাষাকে দিয়ে গিয়েছেন হাজারও মণিমাণিক্য। শুধু পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নয়, বরং তার অন্যান্য রচনা দিয়েও বাংলা গদ্যের সংস্কার করেছিলেন।
পাহাড়ের মতো বিশাল হৃদয়, দুর্জয় মনুষ্যত্ব আর একরোখা আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষটির আজ ২০৫ তম জন্মদিন। বাংলার চেতনাকে নতুন করে গড়ে তোলা ইশ্বর চন্দ্রের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধা।