রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সাজো সাজো রব পুরুলিয়ার বেগুনকোদরে । এখানে মঙ্গলবার থেকে ঐতিহ্যবাহী রাস মহোৎসব শুরু হয়েছে । ঝালদা ২ ব্লকের বেগুনকোদর এলাকার এই উৎসব প্রায় ২০০ বছরের বেশি প্রাচীন । প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই রাস উৎসব পালন করা হয় এখানে ।
যুগ বদলেছে, আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাস উৎসবে নানা পরিবর্তন এসেছে । তবে এখনও কিছু প্রাচীন পরম্পরা বজায় রয়েছে এখানকার উৎসবে । আজও বেগুনকোদরের অধিষ্ঠাতৃদেব শ্রীশ্রীরাধা-গোপীনাথ জীউর বিগ্রহ হাওদায় চড়ে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে । সেইসঙ্গে বাজে ঢাক,ঢোল,সানাই, খোল-করতাল-হরিনাম সংকীর্ত্তনের মেলবন্ধে আলাদাই পরিবেশ তৈরি করে । লোক কথায় যাকে বলা হয়, 'ঠাকুর-বাহিরা', অর্থাৎ ঠাকুর বেরোনো বা ঠাকুরের বাহির হওয়া | তারপর রাসমঞ্চে বসা, ভোগ-রাগ-আরতি চলে ।
বেগুনকোদর রাস মহোৎসবের সূচনা হয় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে । এই রাস মহোৎসবের ইতিহাস কী ? বেগুনকোদরের বাসিন্দা রাধাবিনোদ ঠাকুর গোস্বামী জানান, চৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ ধনঞ্জয় পণ্ডিতের চতুর্থ পুরুষ স্বরূপচাঁদের শিষ্য হয়ে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিলেন । এরপর ঠাকুর তাঁকে নিয়ে বৃন্দাবনে যান । সেখান থেকে ফেরার সময় একটি রাধাগোপীনাথের বিগ্রহ এনে রাজবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করলেন রতন সিংহ । মন্দিরের দায়িত্ব তো বটেই স্বরূপচাঁদকে দেওয়া হল রাজগুরুর অভিধা । এরপর রাধা গোপীনাথজিউকে ঘিরে রাজবাড়িতে আয়োজিত হতে থাকে একের পর এক উৎসব । ঝুলন ও দোল উৎসবের পাশাপাশি একদিন রাস মহোৎসবেরও সূচনা হয় । ১২৫৮ বঙ্গাব্দের পরে বেগুনকোদরে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন জমিদার জগন্নাথ সিংহ । সংস্কার না হওয়ায় এক সময় ভেঙে পড়ে মন্দির । ঐতিহ্য ধরে রাখতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা । বেগুনকোদর নাগরিক মঞ্চের তৎপরতায় নতুন করে সেজে ওঠে প্রাচীন এই রাস মন্দির । মন্দিরের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কৃষ্ণ-রাধার বিভিন্ন মুহূর্ত ও নারায়ণের বিভিন্ন অবতার । নবনির্মিত মন্দিরের আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে সেই এই সব শিল্প শৈলী।
বর্তমানে এই রাস মহোৎসব বেগুনকোদর রাস মেলা কমিটির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় ।
এই রাস মহোৎসব মোট পাঁচদিন চলবে । প্রতিদিনই রয়েছে ছৌ নৃত্য-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবে যোগ দেন আশেপাশের বিভিন্ন গ্ৰামের মানুষজন । আজও এখানকার রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রচুর উন্মাদনা রয়েছে ।