ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় । বাংলা টেলিভিশন জগতের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ । নব্বইয়ের দশক থেকে ছোটপর্দায় অভিনয় করছেন । ১৯৯৮ সালে 'জলতরঙ্গ' সিরিয়ালে প্রথম অভিনয় । তবে, তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরল 'জন্মভূমি' ধারাবাহিকে অভিনয়ের পর থেকে । ভাস্বর তখন ২৩ বা ২৪ । আর এখন অভিনেতা পঞ্চাশের দোড়গোড়ায় । প্রায় ২৬টা বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেছেন । অথচ এতগুলো বছরে ভাস্বর যেন একইরকম রয়ে গিয়েছেন । জন্মভূমি-র ভাস্বর আর গীতা এল এল বি-র ভাস্বরের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করা বেশ কঠিন । আর সেই রহস্যের চাবিকাঠি হল ডিসিপ্লিন ও ডায়েট । ভাস্বর তাঁর ২৬ বছরের কেরিয়ে প্রায় ১২৫টি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন । সিনেমা ও সিরিজেও কাজ করছেন...তবে প্রায়োরিটিতে সবসময় এগিয়ে রেখেছেন ছোটপর্দাকেই । মন দিয়েছেন লেখালিখিতেও । তবে, ভাস্বরের ব্য়ক্তিগত জীবন কম বিতর্কের নয় । অভিনেতা তাঁর বিবাহিত জীবনের এমন এক অন্ধকার অধ্যায় কাটিয়ে এসেছেন, যা তাঁকে বারবার মানসিক, শারীরিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করেছে ।
ভাস্বর বিয়ে করেন দু'বার । কিন্তু, কোনও বিয়েই সুখের হয়নি । দু'বারই ডিভোর্স হল । প্রথম বিয়েতে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে । ৪৯৮-এ ধারায় ফেঁসেছিলেন ভাস্বর । জেলও খাটতে হয় দুই দিন । বারবার উড়ে আসে তীর্যক মন্তব্য । প্রশ্ন উঠেছে ভাস্বরের চরিত্র নিয়ে । সেই অধ্যায় কাটিয়ে অনেক ভরসা নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছিলেন । কিন্তু, আবারও তিক্ত অভিজ্ঞতা । ভাস্বরের অভিযোগ, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী নবমিতা একদিন হঠাৎ বেরিয়ে যান । ভাস্বর জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে রয়েছেন । আকাশ ভেঙে পড়ে ভাস্বরের মাথায় । তারপরেও সম্পর্ক বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন । পারেননি । নবমিতার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন প্রায় চার বছর হয়ে গেল । সম্প্রতি, আবারও সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে । সম্প্রতি, একটি ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ভাস্বর । যা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ভাইরাল হয়েছে ।
উত্তম কুমারের বড় নাতনি নবমিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ভাস্বরের । ২০০৩ সাল থেকে একে অপরকে চেনেন তাঁরা । তখন তাঁরা শুধুই বন্ধু । ভাল-লাগা তৈরি হল ২০১৩ সালের পর থেকে । ততদিনে ভাস্বর তাঁর প্রথম বিয়ের ভাঙার একটা অন্ধকার অধ্যায় পার করে এসেছেন । তবে, নবমিতাকে দেখে ভাস্বরের মনে হয়েছিল, আবারও প্রেমে পড়া যায়, আবারও বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় ।
২০১৪ সালে চার হাত এক হয় ভাস্বর-নবমিতার । তারপর থেকে ভালই কাটছিল তাঁদের দিনগুলি । আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হত তাঁরা হ্যাপিলি ম্যারেড । কিন্তু, আদৌ কি তাই ছিল ?
ভাস্বর ওই ইউটিউব চ্যানেলে জানিয়েছেন, বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলাতে নবমিতার ওই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের হয়তো একটা আভাস পেয়েছিলেন ভাস্বর । কিন্তু, সেভাবে পাত্তা দেননি । অষ্টমঙ্গলা সেরে ফেরার সময় নবমিতা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়ে বেরিয়ে যায় । তখন গৌরবের প্রথম স্ত্রী অনিন্দিতাই ভাস্বরকে জানান, নবমিতাকে এভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি । কিন্তু, বিষয়টা গুরুত্ব দেননি ভাস্বর ।
বিয়ের পরই ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে চেয়েছিলেন ভাস্বর । কিন্তু, নবমিতা রাজি ছিলেন না । একবছর সময় চেয়ে নিয়েছিলেন প্রথমে । পরে অবশ্য নবমিতা জানিয়ে দেন, মা হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । কারও কোনও দায়িত্ব তাঁর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয় ।
২০১৭ সাল । এরকমই কোনও এক ডিসেম্বর মাস । ততদিনে, ভাস্বর-নবমিতা তিন বছর কাটিয়ে ফেলেছেন একসঙ্গে । কিন্তু, হঠাৎ একটা রাতে বদলে যায় সবটা । ভাস্বর বলেন, " বিয়ের বাড়ি থেকে সেদিন ফিরেছি । হঠাৎ মধ্যরাতে ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজে । দরজা খুলে দেখি কেউ নেই।" তারপর নবমিতা বলে, ও বাথরুমে যাবে । কিন্তু, মিনিট দশ-পনেরো কেটে যাওয়ার পর যখন দেখেন, নবমিতা ফিরছে না, তখন বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমের দিকে যান ভাস্বর । কিন্তু, সেখানে গিয়ে দেখেন নবমিতা নেই । আরও কিছুক্ষণ পর আবিষ্কার করেন, নবমিতা গোটা বাড়িতেই নেই । পাতি বাংলায় মধ্যরাতে নবমিতা পালিয়ে যায়, তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে । কমপ্লেক্সে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন ভাস্বর । খবর দেন নবমিতার বাড়িতেও । তাঁরা আসেন । চিন্তায় সকলের ঘুুম উড়ে গিয়েছিল । কিন্তু, সেদিন ভোর চারটে নাগাদই বাড়ি ফেরে নবমিতা । স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তৃতীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন । তাঁকে জোর করে ভাস্বরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু, তিনি আর ভাস্বরের সঙ্গে থাকবেন না । ওই রাতেই ভাস্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নবমিতা ।
কিন্তু, আবারও কয়েকদিন পর ভাস্বরের জীবনে ফিরে আসেন নবমিতা । ভাস্বরের কাছে ক্ষমা চান । অভিনেতাও সব ভুলে নতুন করে সংসার শুরু করেন নবমিতার সঙ্গে । সেইসময়ে, আবারও একবার ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের কথা বলেছিলেন ভাস্বর । কিন্তু, নবমিতা জানিয়ে দেন, তিনি কাজে মন দিতে চান, সিরিয়াল করতে চান । ভাস্বরের দাবি, তাঁর এক কথাতেই সুদীপা চট্টোপাধ্যায় তাঁর সিরিয়ালে নবমিতাকে কাস্ট করেন । কিন্তু, তারপরেও নবমিতাকে ধরে রাখতে পারেননি ভাস্বর ।
নবমিতা ফিরে আসার পর প্রথম কয়েকটা দিন সবকিছু স্বাভাবিক ছিল । কিন্তু, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে । শুটিং সেটে প্রায়ই দেরি করে যেতেন নবমিতা । ভাস্বরের সঙ্গেও প্রায়ই অশান্তি, ঝামেলা লেগেই থাকত । এমনকী, শুটিং সেটেও ভাস্বরকে অপমান করেন বলে দাবি করেছেন অভিনেতা । এরই মধ্যে ভাস্বরের স্লিপ ডিস্ক হয় । তখনই নবমিতা ফের বলে এখানে তিনি থাকতে পারছেন না । থাকলেই ভাস্বরের সেবা করতে হবে । তাঁর পক্ষে তা সম্ভব নয় । তারপর থেকেই আলাদা থাকতে শুরু করেন তাঁরা । সেইসময় ভাস্বরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিস্ফোরক অভিযোগও তোলেন অভিনেত্রী । কিন্তু, তারপরেও ডিভোর্সটা একেবারেই চাননি ভাস্বর । কিন্তু, নবমিতা চেয়েছিলেন । অবশেষে ২০২০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় তাঁদের ।
ভাস্বরের দাবি, ডিভোর্সের পর আবারও ফিরে আসতে চেয়েছিলেন নবমিতা । বিয়ে নয়, লিভ-ইনে থাকতে চেয়েছিলেন । কিন্তু, ভাস্বর রাজি হননি ।
নবমিতা চলে যাওয়ার পর আবারও অন্ধকারে ডুবেছিলেন ভাস্বর । কিন্তু, ধীরে ধীরে আলোর দিকে ফিরে আসেন । আবারও লেখালেখি শুরু করেন । কাশ্মীরে যাতায়াত বাড়ে তাঁর । এমনও গুঞ্জন ছড়ায়, কাশ্মীরী মেয়ের প্রেমে পড়েছেন অভিনেতাও । যদিও ভাস্বর তা অস্বীকার করেছেন বারবার । তবে, নবমিতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভাস্বর । তাঁর চলে যাওয়ার পরই জীবনের একটা অন্যদিক খুঁজে পেয়েছেন তিনি । সেই কাজেই এখন ডুবে রয়েছেন । নতুন করে আর কোনও সম্পর্কে জড়াতে চান না । কারণ তিনি মনে করেন, বিয়েটা তাঁর জন্য নয় । কাজে, লেখালিখিতেও সুখে আছেন, সম্মানে আছেন ।