প্রেম, বিশ্বাসও সবই ভরপুর আছে, তবু বিয়ের নাম শুনলেই ভয়। বিয়ে নামের সম্পর্কে ফোবিয়া, খুব চেনা এই সমস্যা এখন গ্রাস করছে তরুণ প্রজন্মকে। বিয়ে করলে স্বাধীনতা চলে যাবে, এই আশঙ্কা থেকে অনেকেই বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটি থেকে শতহস্ত দূর থাকছেন। মনের মানুষের সঙ্গেও আপোষ করতে হবে, সম্পর্ক এক সময় একঘেয়ে হয়ে আসবে, প্রেমিক-প্রেমিকের রসায়ন ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, ভেবেই বিয়ে-তে এগোতে চাননা অনেকে। এই ভীষণচেনা সমস্যার একটা সমাধান বের করেছেন জাপানিরা। কী তা? ‘উইকেন্ড ম্যারেজ’ বা ‘সেপারেশন ম্যারেজ’ - বিয়েও থাকবে, আবার তাতে আজীবন লেগে থাকবে নতুন নতুন গন্ধ।
সেপারেশন ম্যারেজে কেবল সপ্তাহান্তে ছুটির দিনগুলিতে দম্পতিরা একসঙ্গে থাকেন। বাকি দিনগুলিতে তাঁরা সঙ্গীর থেকে আলাদা নিজের মতো করে সময় কাটান, যে যার মতো! পরিবারের সব দায়দায়িত্ব কিন্তু দু’জনেই ভাগ করে নেন রোজই। কেবল সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকেন না!
উইক এন্ড ম্যারেজের এই ধারণা কিন্তু ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যোদয়ের দেশে। দুটো মানুষ সম্পর্কে থাকলেই যে তাঁদের লাইফস্টাইল একরকম হবে, এমন তো নয়। কোনও যুগলের ঘুমের সময় আলাদা, কারোর খাদ্যাভ্যাস আলাদা, কারোর শখ আলাদা, রোজ সেসব নিয়ে ঝগড়া করলে সম্পর্ক ক্ষয়ে আসে, তারচেয়ে সপ্তাহের দুটো দিন দেখা হলে প্রেমে প্রেমেই কেটে যায়, তাই সুখে থাকতে ভূতের কিল খেতে চাইছেন না দম্পতিরা, অতএব ‘উইকেন্ড ম্যারেজ’-এর পথই বেছে নেওয়া।
সপ্তাহের শেষে যখন স্বামী-স্ত্রীর দেখা হচ্ছে, কত কথা জমছে, দুজনের দুজনকে বলার মতো। রোম্যান্টিসিজমটাও থাকছে ভরপুর। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, রেস্তরাঁয় যাওয়া, নিজেদের মতো সময় কাটানোর মতো কোয়ালিটি সময় কাটানোর ফলে সম্পর্কের ভিত মজবুত হচ্ছে। আবার ‘উইকেন্ড ম্যারেজ’-এর ক্ষেত্রে খরচটাও অনেকটাই কমে যায়। ট্যাকের জোর বাড়াতেও অনেকেই এই বিকল্প বেছে নিচ্ছেন। কারণ, বাড়তি খরচ সব উইকেন্ডের দুটো দিন।
ইন্দোনেশিয়ায় আবার সম্পূর্ণ আলাদা একরকমের বিয়ের ধারণা ট্রেন্ড করতে শুরু করেছে। 'প্লেজার ম্যারেজ'। সে দেশে পর্যটক হিসেবে ঘুরতে আসা পুরুষদের বিয়ে করছেন ইন্দোনেশিয়ার তরুণীরা। একে বলা হচ্ছে 'প্লেজার ম্যারেজ'। কতদিন টিকছে সেই বিয়ে? পর্যটক স্বামীর যতদিনের সফর, ঠিক ততোদিনের।
এই বিয়েকে স্বীকৃতি দেয়নি ইন্দোনেশিয়ার আইন। তবু বিপুল ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বিয়ে। কেন? একটা বড় কারণ হল, দেশে কাজের অভাব। তা 'প্লেজার ম্যারেজ' কীভাবে পেশা হয়ে উঠছে? বিদেশি পর্যটকদের বিয়ে করার বদলে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পাচ্ছেন তরুণীরা। বিয়ে প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার করে পাওয়া যায় বিয়েতে। ঘরোয়া, ছিমছাম বিয়ের অনুষ্ঠানও হয়। ভিনদেশি স্বামী, যতদিন ইন্দোনেশিয়ায় থাকেন, স্ত্রী হিসেবে যাবতীয় দায়দায়িত্ব পালন করেন সদ্য বিবাহিতা তরুণী।
দু'দিনের হলেও সে সংসার কিন্তু মিথ্যে নয়। স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে যৌনতাও হয়। আবার পর্যটক স্বামী ইন্দোনেশিয়া ছাড়লে ডিভোর্সও হয়ে যায়। পেশাদার 'ক্ষণিকের স্ত্রী'রা কেউ কেউ এতদিনে ১৫ টা ২০ টা করে 'প্লেজার ম্যারেজ' করে ফেলেছেন। প্লেজার ম্যারেজের ক্ষেত্রে অধিকাংশ পুরুষ হন মধ্যপ্রাচ্যের কোনও দেশ থেকে আসা পর্যটক।
এ তো গেল, আজব রকমের কিছু বিয়ের গল্প। চিন দেশে আবার বিয়ে করার প্রবণতাই ক্রমশ কমছে। ১৯৮০-এর পর ২০২৪-এ চিনদেশে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা রেকর্ড হারে কমেছে। মূলত তিন রকমের ঘটনা ঘটছে সে দেশে। একটু বেশি বয়সে বিয়ে করার প্রবণতা বাড়ছে, বিয়ের খরচের কথা ভাবলে অনেকেই পিছিয়ে আসছে। আর সার্বিক ভাবেই বিয়ের প্রতি অনীহা বাড়ছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রবণতার প্রতিফলন হচ্ছে দেশের জন্ম হারেও। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটাতে এখন ক্রমশ কমছে শিশুর জন্মের হার।
বিয়ে করা বা না করার নানা গল্প তো শুনলেন। এক এক দেশের এক এক রকমের গল্প। বিয়ে ভাঙ্গারও নিশ্চয়ই নানান গল্প থাকে। একেবারে গড়পড়তা কারণের বাইরে অদ্ভুত কিছু কারণ থাকে। আজ সেরকমই কিছু কিম্ভূত ঘটনার উল্লেখ করব দর্শক পাঠকদের জন্য।
কর্ণাটকের এক স্বামী স্ত্রীয়ের কাছ থেকে ডিভোর্স চেয়ে কোর্টে গিয়ে জানিয়েছিলেন, স্ত্রী ম্যাগি ছাড়া কিছু রান্না করতে জানত না। সকালের জলখাবারে, দুপুরে, রাতে সবসময় স্ত্রী স্বামীর জন্য ২ মিনিটে রেঁধে আনতেন ম্যাগি।
স্ত্রী রোজ স্নান করেন না, এই অভিযোগ এনে উত্তরপ্রদেশে এক স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। এখানেই শেষ নয়, স্বামী আদালতে জানিয়েছিলেন, স্ত্রীকে স্নান করতে বললেই রোজ তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়ে যায়।
তাইওয়ানের এক ব্যাঙ্ক কর্মচারী একই মহিলাকে ৩৭ দিনের মধ্যে চারবার বিয়ে করেন এবং তিনবার ডিভোর্স দেন! অবাক হচ্ছেন তো? আসলে তাইওয়ানের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্মীকে বিয়ের জন্য ৮ দিনের ছুটি দিতে বাধ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা। ওই ব্যাঙ্ককর্মী প্রথমে বিয়ে করে ৮ দিনের ছুটি পেয়েছিলেন। ছুটি শেষ হতে না হতেই তিনি সদ্যবিবাহিতাকে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন, তারপরেই ফের বিয়ে করেন৷ ফলে আরও ৮ দিন ছুটি৷ এমন করে বিয়ে-ডিভোর্স-বিয়ের মাধ্যমে তিনি মোট ৩২ দিন ছুটি আদায় করার পর ব্যাঙ্ক বেঁকে বসে। তারা আর ছুটি দিতে নারাজ। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যান ওই ব্যাঙ্ককর্মী। আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেয়। ব্যাঙ্কের জরিমানা হয় ৫২, ৮০০ ভারতীয় টাকা।
আচ্ছ, স্বামীর ভালোবাসা চান না, এমন স্ত্রী-ও আছেন? আলবৎ আছেন। শুধু তাই নয়, স্বামীর 'অত্যধিক ভালোবাসা'য় তিতিবিরক্ত হয়ে ডিভোর্স চেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের এক মহিলা। বিয়ের মাত্র ১৮ মাসের মাথায় তিনি ডিভোর্সের আবেদন করেন। কারণ কী? না, তাঁর স্বামী কখনও তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করেন না। মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসেন৷ কখনও চিৎকার করে কথা বলেন না৷ গেরস্থালির কাজকর্মে সবসময় সাহায্য করেন৷ ওই মহিলা জানান, এত ভালোবাসায় তাঁর দমবন্ধ দশা৷ তাই তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হতে কে না চায়? বিয়ের বাজারে ইউপিএসসি পাশের দামও তো অনেক। কিন্তু ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেওয়ার দোষে ভোপালোর এক নবদম্পতির বিয়ের যায় যায় দশা। বধূটির অভিযোগ, তাঁর স্বামী দিনরাত ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তাঁর দিকে একফোঁটা মনোযোগ দেন না। সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া তো দূরস্থান। এমনকি ভালো করে কথাটুকুও বলেন না। এমন বই পাগল হবু আমলার সঙ্গে তিনি এক্কেবারে থাকতে চান না।
কথায় আছে, বিয়ের লাড্ডু যে খেয়েছে সে পস্তিয়েছে তো বটেই, যে খায়নি, সেও পস্তিয়েছে। তা উত্তরপ্রদেশের মীরাটে লাড্ডুর জন্য ১০ বছরের সংসার ভাঙতে চেয়েছেন এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী তাঁকে লাড্ডু ছাড়া কিচ্ছু খেতে দেন না। নেপথ্যে নাকি এক তান্ত্রিকের নির্দেশ। সকালেও চারটি লাড্ডু, সন্ধেবেলাতেও তাই৷ আর কিচ্ছু না৷ এমন লাড্ডুময় বিয়েতে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তাই ডিভোর্স ছাড়া পথ নেই।