নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজে ধরাশায়ী হওয়ার পর একের পর এক সমালোচনার বান ধেয়ে আসছে টিম ইন্ডিয়ার দিকে। সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞ থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন সুনীল মনোহর গাভাসকর। নভেম্বরেই শুরু হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টেস্ট সিরিজ। যার পোশাকি নাম- বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি। পাঁচ টেস্টের ওই সিরিজের মধ্যে অন্তত চারটি টেস্ট জিততেই হবে ভারতকে। তবেই, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে পারবে রোহিত অ্যান্ড কোং। যদিও সুনীল গাভাসকরের মতে, ভারতের পক্ষে এই চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। প্রাক্তন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানান, 'টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ হারানো সম্ভব নয় ভারতের পক্ষে। সেটা হলে আমি খুবই অবাক হবো। তবে, আনন্দও যে পাব, সে কথাও বলাই সঙ্গত। কিন্তু, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে ৪-০ হওয়াটা স্বপ্নই! আমার মনে হয়, এখন প্রতি ম্যাচ অনুযায়ী ফোকাস করা উচিত। একটা একটা টেস্ট টার্গেট করে ধাপে ধাপে এগোনোই ভাল। নইলে একবারে ৪-০ ব্যবধানের চাপ মাথায় নিয়ে এগোলে বিদেশের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে'।
উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ মরসুমে শেষবার ভারতকে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছিল অজিরা। প্রায় ১০ বছর আগে। গত চারটি টেস্ট সিরিজেই ভারতের কাছে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে একটু এগিয়েই শুরু করার কথা টিম ইন্ডিয়ার। কিন্তু, কিউয়িদের কাছে হারের পর যেন গোটা ছবিটাই বদলে গিয়েছে এক লহমায়। একদিকে বেশ কিছুটা নড়বড়ে রোহিত অ্যান্ড কোং। অন্যদিকে, ভারতকে নিজের ঘরের মাটিতে পর্যুদস্ত করবে বলে তেতে থাকা অস্ট্রেলিয়া। ভারত ২০১৮-১৯ মরসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে। পরে ২০২০-২১ মরসুমে পুনরায় অজি সফরে গিয়ে ভারত ফের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। অর্থাৎ, শেষ ২টি অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে সিরিজ জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। সানির দাবি, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের কথা না ভেবে ভারতের উচিত সিরিজ জয়ের দিকে মন দেওয়া।
সিরিজ জিততে ভারতীয় দল মরিয়া হলেও তা যে খুব সহজ হবে না, তার আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে প্রাক্তনদের কথাতেও। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন কিপার-ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। তাঁর কথায়, একটি সিরিজ হারের প্রভাব যদি পরবর্তী সিরিজে পড়ে, তাহলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে নিউজিল্যান্ডের হারের প্রভাব পড়বে টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটারদের মধ্যে।
গিলক্রিস্ট আরও বলেন, ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা নিজেরাই কঠিন প্রশ্নের মুখে। তবে প্রত্যাশা করা যায় না যে ভারতকে সহজেই হারানো যাবে। তবে ঘরের মাঠে হেরে যাওয়ার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ঘরের মাঠে শেষ বার ভারত কবে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল ভারত তা নাকি মনেই করতে পারছেন না তিনি।
একই সুর অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের গলায়ও। তবে এর পাশাপাশি তিনি নিজের দলকে সতর্কবার্তাও দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, অজি টিমে তিন বিশ্বমানের পেসার, দুর্দান্ত স্পিনার রয়েছে যাঁদের সামনে তিনি একজন ব্যাটার হিসেবে স্নায়ুর চাপে ভুগবেন। তবে, ভারতীয় দলের জসপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ সিরাজকে সামলে দিতে পারলে বড় রান তোলা সম্ভব হবে।
আগামী ২২ নভেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শুরু করবে টিম ইন্ডিয়া। সদ্যই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধরাশায়ী হয়েছে ভারত। ফলে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নামার বেশ আগে থেকেই প্রস্তুত হচ্ছে ভারতীয় দল।
তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অনেক আগে থেকেই সে দেশে ক্রিকেটার পাঠাতে শুরু করেছে ভারতীয় দল। আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও নীতীশ কুমার রেড্ডি। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন লোকেশ রাহুল ও ধ্রুব জুরেলও।
অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য ১৮ সদস্যের ভারতীয় স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। সেই দলে জায়গা হয়নি মহম্মদ শামির। চোটের কারণে এখনই দেশের জার্সি গায়ে গলাতে পারছেন না এই স্পিডস্টার। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে, ২২৯টি টেস্ট উইকেটের মালিক মহম্মদ শামি নাকি আর লাল বল খেলবেন না। এবার তিনি মনোনিবেশ করবেন সাদা বলেই।
শুধু দল নয়। কোচ হিসেবেও গৌতম গম্ভীরের কাছে 'অগ্নিপরীক্ষা' হতে চলেছে আসন্ন বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি। দলের অন্দরে কানাঘুষো, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারই হয়ে উঠতে পারেন 'ভিলেন'!
সম্ভবত এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই গৌতম গম্ভীরের 'ডানা' ছাঁটার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কোচ হিসেবে গৌতম গম্ভীর ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনও পর্যন্ত এই শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। এদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২৭ বছর বাদে একদিনের সিরিজে হেরে গিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ও একদিনের সিরিজে জিতলেও দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজে ০-৩ ব্যবধানে পর্যুদস্ত হয়েছে ভারত। শুধু তাই নয়, এই প্রথম বার দেশের মাটিতে তিন বা তার বেশি টেস্টের সিরিজে ধরাশায়ী হয়েছে ভারত। অর্থাৎ, গম্ভীরের কোচিংয়ে ভারত দু’টি টি-টোয়েন্টি, দু’টি টেস্ট ও একটি এক দিনের সিরিজ খেলেছে। পাঁচটির মধ্যে দু’টি সিরিজ হেরেছে তারা। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে গৌতম গম্ভীরের কোচিং নিয়ে। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করার পরে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর।
সব মিলিয়ে সময়টা অত্যন্ত চাপের যাচ্ছে গম্ভীরের। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্ট্রেলিয়া কার্যত মরণ-বাঁচন হয়ে দাঁড়াতে চলেছে গৌতির কাছে। এই সিরিজের উপরেই নির্ভর করবে রোহিতদের দায়িত্বে আর তিনি থাকবেন কি না।