বড়দিনের মরশুম। শহর কলকাতা জুড়ে ক্রিস্টমাস ট্রি, জিঙ্গল বেলের পসরা। বেকারির গায়ে গায়ে কেক-কুকিজের গন্ধ। কলকাতার রাস্তা থেকে আমার আপনার প্লেলিস্টে এখন দারুণ হিট নানা রকমের ক্যারল। শহরের চার্চগুলো গমগম করছে পিয়ানো বা পাইপ অর্গ্যানের সুরে। এই শহরের এক গির্জায় রয়েছে সবচেয়ে বড় পাইপ অর্গ্যান। ছোট বড় মিলিয়ে হাজার দেড়েক পাইপ রয়েছে সেই যন্ত্রে। আর, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড় পাইপ অর্গ্যানটি রয়েছে শহর কলকাতার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে। অথচ, অনেকেই কিন্তু জানেন না তা।
ডালহৌসি চত্ত্বরের একেবারে কাছেই কাউন্সিল হাউজ স্ট্রিট। আর সেখানেই মাথা উঁচু করে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে সেন্ট জন'স চার্চ। আর, সেখানেই রয়েছে কলকাতার সবচেয়ে বড় পাইপ অর্গ্যানটি। যা তৈরি হয়েছিল ১৮২৪ সালে। সেন্ট জনস চার্চের অন্যতম আকর্ষণ কিন্তু এই বিশাল পাইপ অর্গ্যান।
প্রথম প্রথম নাকি অর্গ্যান বাজাতে হাপর ব্যবহার হত। ইংল্যান্ডের উইলিয়াম হিল অ্যান্ড সনস এবং নরম্যান অ্যান্ড বিয়ার্ড লিমিটেড, যারা তৎকালীন নির্বাক চলচিত্রের প্রেক্ষাপটে বাজানো পাইপ অর্গ্যান তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল, এই অর্গ্যানও তাঁদের বানানো।
কেউ কেউ বলেন, শুধু কলকাতা শহর নয়, এত বড় আর এত বুড়ো পাইপ অর্গ্যান নাকি ভূভারতেই আর নেই। আশ্চর্য ঘটনা কী জানেন? বয়স দু'শ হলে কী হবে! এই পাইপ অর্গ্যান দিব্যি বাজে! শিল্পীর আঙুলের ছোঁয়ায় এখনও গমগম করে গির্জা চত্ত্বর। কারা যেন বলে, যন্ত্রের প্রাণ নেই। দু শতক পার করে ফেলা অর্গ্যান কি কিছুই মনে রাখেনি? সঙ্গে নিয়ে চলেনি, এই কলকাতার জানা অজানা গল্প?
বছর দশক আগেও সেন্ট জোন্স চত্ত্বরে গেলে শোনা যেত জনি পুর্তিকে। শহরের কত কত তরুণ তরুণীর ক্রিস্টমাস ক্যারলের সঙ্গে পরিচয়-ই করিয়ে দিয়েছেন জনি। কখনও জেনে, কখনও অজান্তে। আজ, জনির সুর থেমেছে। ঘুমিয়ে পড়েছেন শিল্পী। ব্যটন এখন অন্য কারোর হাতে। বুড়ো হচ্ছে সেন্ট জন'স। কিন্তু সুর থামছে না, বরং ছড়িয়ে পড়ছে।