সমাজ তাঁকে মনে রেখেছে নানা কারণে। তবে ১২ জানুয়ারি, এই জাতীয় যুব দিবসে বিবেকানন্দকে নিয়ে সেরকম নানা আলোচনার তলায় চাপা পড়ে যায় স্বামীজির (Swami Vivekananda) ভোজনরসিক সত্তাটা। একেবারে ছোট থেকেই খেতে বড় ভালবাসতেন নরেন। সিমলের দত্ত বাড়ি ছিল খাওয়াদাওয়ার বাড়ি। নরেনের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত প্রায়ই বাবুর্চি ডেকে বাড়িতে নানা মোগলাই রান্না করাতেন। এ দিক থেকে নরেনও বাপ কা বেটা।
অল্প বয়সেই নরেন ফ্রেঞ্চ রান্নার বই সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছিলেন গ্রিডি ক্লাব সংগঠন। সেখানে রান্না হত, রান্না নিয়ে গবেষণা চলত দিনরাত। হাসের ডিমের সঙ্গে চাল মাখো মাখো করে আলু মটর দিয়ে ভুনি খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন সেই কোন অল্প বয়সে। প্রথম জীবনে কচুরি সিঙ্গারার প্রতি প্রেম ছিল দারুণ।
রামকৃষ্ণের (Ramkrishna) এক ভক্ত একবার খানিক হিংসের থেকেই ঠাকুরকে বলে দিলেন নরেন হোটেল টোটেলেও খায়। রামকৃষ্ণ শুনে বলেছিলেন, "তুই যদি হবিষ্যিও খাস, আর নরেন হোটেলে খায়, তাও তুই নরেনের সমান হতে পারবি না"।
ফরাসি, জার্মান, আমেরিকান, ইংরেজ, কোন জাতি কেমন খাওয়া দাওয়া করে, তা নিয়েও বিস্তর পড়াশোনা ছিল বিবেকানন্দের। দেশে বিদেশে নানা সময় নানা মশলা দিয়ে রীতিমতো এক্সপেরিমেন্ট করে রান্না করতেন স্বামী জি।
বিদেশে থাকার সময় জাহাজে করে তাঁর জন্য এ দেশ থেকে নিয়মিত পাঠানো হত ছোলার ডাল, কাচা মুগ ডাল। ভাজা মুগ ডাল পেলে গোসা হত স্বামীজির। চিঠিতে হুমকি দিতেন টেমসের জলে ভাসিয়ে দেবার।
ফলের মধ্যে খুব তৃপ্তি করে খেতেন আম আঙ্গুর। এক নিমন্ত্রন বাড়িতে গিরীশ ঘোষের পাতে পরপর মিষ্টি আম পড়ায়, আর তাঁর পাতে টক আম পড়ায় ভয়ানক চটেছিলেন শোনা যায়।
খাদ্যরসিক বিবেকানন্দ কিন্তু ঘরে বসে না থেকে তরুণদের শরীরচর্চায় মনোযোগী হতে বলতেন Swami Vivekananda)। স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন নিজেও বহু খেলায় অংশ নিয়েছেন। সময় দিয়েছেন নানা আখড়ায়।
ফুটবল, ফেন্সিং ও বক্সিংয়ের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা অনেকেই জানি আমরা। যা জানি না অতটা, তা হল, ক্রিকেটও খেলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)।
১৭৯২ সালে ব্রিটিশদের গঠন করা কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে তখন জমাটি লড়াই হতো টাউন ক্লাবের। বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে একদিন আড্ডা দিচ্ছিলেন বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)। আড্ডাতেই বিবেকানন্দকে ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব দেন হেমচন্দ্র। প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান বিবেকানন্দ। এরপর হেমচন্দ্র ঘোষের তত্ত্বাবধানে হাত পাকিয়ে ফেললেন বোলিংয়ে। এরপর নামলেন ইডেনে, সেদিন কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছিল টাউন ক্লাব।
ইডেনের বয়স তখন প্রায় ২০ বছর।
টাউন ক্লাবের বোলার বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda played cricket)। দুর্ধর্ষ খেলেছিলেন ওই দিন! মাত্র ২০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের ৭টা উইকেট!