কাজের চাপ-বসের সঙ্গে ঝামেলা, কাজের বাইরের জীবনেও স্ট্রেস! রাতের পর রাত আধঘুমে কাটছে দিন। সব ছেড়েছুড়ে দিন কয়েক ঘুরে এলে কেমন হয়? কিন্তু ঘুরতে গিয়ে কি ঘুমের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে? কে বলছে, যাবে না? সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে 'স্লিপ ট্যুরিজম'। সেটা কী? হাজার হজার টাকা খরচ করে দেশে বিদেশে সফর করবেন কেন? না ঘুমের জন্য। কেন? ছুটি নিয়ে বাড়িতেই ঘুমনো যায় না? বাড়িতে, নিজের ঘরে চেনা পরিবেশে ঘুমোলে রোজকার স্ট্রেস-একঘেয়েমি পুরোপুরি ভুলে থাকা যায় না। বরং, চোখ মেললেই জানলা দিয়ে পাহাড় কিম্বা সমুদ্র দেখা গেলে, সে ঘরে ঘুমনোর মজাই আলাদা। শুধু কী ঘুম! রোজকার থোড় বড়ি খাড়ায় সেলফ কেয়ার থেকেও নিজেদের বঞ্চিত রাখি আমরা। ঘুরতে গেলে, সেই সময়টুকু নিজেদের যত্ন নিতে চাইছেন অনেকেই।
ইন্ডিয়ান মেডিসিন অফ স্লিপ জার্নাল-এ প্রকাশিত একটা তথ্য বলছে, ৬৪ % শহুরে ভারতীয় সকাল ৭ টার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে, এবং ৬১ % ভারতীয় দিনে সাত ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমোয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াটাকে চিকিৎসকেরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের মহামারির মধ্যে অন্যতম বলছে, এবং ভারত সেই মহামারিতে আক্রান্ত।
নিজের শরীর আর মনের যত্ন নেওয়ার জন্য ট্র্যাভেল করার একটা গালভরা নাম আছে, ওয়েলনেস ভ্যাকেশন। আধুনিক জীবনে মানসিক অবসাদ, কাজের চাপ, পিয়ার প্রেশার, অ্যাঙ্গজাইটি নিত্যসঙ্গী, এসব থেকে রোজকার জীবনে তৈরি হয় কতশত ক্ষত, সে সব সারাতেই দরকার 'সেলফ কেয়ার'। আর সে কারণেই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়েলনেস ভ্যাকেশন।
'ওয়েলনেস রিট্রিটের' ধারনাটা ঠিক কী? শুধু পাহাড় জঙ্গল বা সমুদ্রের নিস্বর্গ উপভোগ না করে এমন কোথাও ছুটি কাটানো যেখানে রথ দেখা-কলা বেচা দুই-ই হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোও হবে, আবার সেলফ কেয়ারও হবে।
অতিমারী উত্তর পর্বেই ওয়েলনেস নিয়ে ভাবার চল বেড়েছে। যোগাভ্যাস, আয়ুর্বেদ থেরাপির প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে শুরু করেছি করোনা পর্বেই।
আমাদের দেশেই কেরালা বেশ কিছু আয়ুর্বেদ ম্যাসাজ সেন্টার রয়েছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সে সব। ঋষিকেশ, হরিদ্বার তো যোগাভ্যাসের জন্য খুবই বিখ্যাত। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, ওয়েলনেস পর্যটন ক্রমশ অর্থনৈতিক দিক থেকে ফুলে ফেঁপে উঠছে সারা বিশ্বজুড়েই। শুধু চোখের আরামের চেয়ে মন আর মগজের আরামেই বেশি ঝুঁকছে এই প্রজন্ম।
মুসৌরি, মানালিতে বিলাসবহুল যে কোনও রেসর্টেই থাকছে স্পা, বা আয়ুর্বেদ ম্যাসাজের ব্যবস্থা। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যোগাভ্যাস কাজ করে মানসিক ডিটক্সিকেশনের।
এসব শব্দ, এক দশক আগেও অচেনা ঠেকত মধ্যবিত্ত পরিবারে। কিন্তু আধুনিক সময়ে জীবন হয়ে উঠছে জটিল, রোজ একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছি আমরা, সেই ক্ষতয় মলম লাগাচ্ছে নেচারোপ্যাথি। বিলাসবহুল হোটেলে কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০ থেকে ৫০, ৬০ সব বয়সের মানুষই আসছেন ওয়েলনেস ভ্যাকেশনে।
বছরে দু'বার ভ্যাকেশনে গেলে অনেকেই অন্তত একবারের জন্য বেছে নিচ্ছেন এই 'মন ভাল করা' ছুটি। ভাল খাবার যেমন দেহের পুষ্টির জন্য জরুরি, তেমনই সুন্দর একটা মনের জন্যেও জরুরি 'ওয়েলনেস' ছুটি। ছুটি মানেই, দিনভর ফুর্তি, লোকেশন বদল, খাওয়া দাওয়া হইহই, এই ধারনা এখন বস্তাপচা। শান্ত, চুপচাপ, ছিমছাম ডেস্টিনেশন বেছে নিচ্ছেন অনেকেই, মনের আরামের জন্য।