নতুন বছরর শুরুতেই আসছে বড়দিন! এই...রে ভুল বলে ফেললাম, না? না... একদম ভুল না। খাস কলকাতা শহরেই জানুয়ারির ৬ তারিখ উদযাপিত হবে বড়দিন।
২৫ ডিসেম্বর, পয়লা জানুয়ারি পেরিয়ে শহর যখন একটু জাঁকজমকহীন, ৬ জানুয়ারি কলকাতার একটি গির্জায় পালিত হয় বড়দিন। আর্মানি গির্জা। পোশাকি নাম ‘আর্মেনিয়ান হোলি চার্চ অব নাজারেথ’। ব্রেবোর্ন রোডের এই গির্জার বয়স খাতায় কলমে ৩০০ বছরের বেশি। কলকাতার সবচেয়ে পুরনো গির্জা কিন্তু এটাই।
আর্মেনিও ক্যালেন্ডার মতে যিশুর জন্মের তারিখ ৬ জানুয়ারি। চতুর্থ শতক পর্যন্ত খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা প্রতিটা দেশই এই দিনেই বড়দিন উদযাপন করতেন। রোমান ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ পরে সারা পৃথিবীজুড়ে ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে।আর্মেনিওরা কিন্তু তাঁদের পুরনো নিয়মেই বড়দিন পালন করেন আজও। আমাদের কলকাতার বুকে যে এক টুকরো আর্মেনিয়া, সেখানেও নিয়মটা তাই একই।
কলকাতার সঙ্গে আর্মেনিওদের সম্পর্ক কিন্তু অনেক, অনেক পুরনো, ইংরেজদের চেয়েও। সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতায় এসেছিলেন আর্মেনিওরা। ভারতের সঙ্গে আর্মেনিয়ানদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। পার্সিয়া, আফগানিস্তান, তিব্বতের পথে সেই বাণিজ্য চলত। আর, তাঁদের হাত ধরেই খ্রিস্টধর্ম প্রথম প্রবেশ করেছিল এই দেশে। কলকাতায় তাঁরা গির্জা, চ্যাপেল, বাড়ি সবই গড়ে তুলেছিলেন।
১৬৮৮ সালে তৈরি হওয়া কাঠের আর্মেনিও গির্জাটা ১৭০৭ সালে পুড়ে যায়। এরপর ১৭২৪ সালে আর্মেনিয়ান আগা জ্যাকব নাজারের উদ্যোগে তৈরি হয় এখনকার 'আর্মেনিয়ান হোলি চার্চ অফ নাজারেথ'। ১৭৩৪ সালে কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত আর্মেনিয়ান পরিবার হাজারমলদের উদ্যোগে তৈরি হয় আর্মেনিয়ান ক্লক টাওয়ার-সহ গির্জার ঘণ্টা ঘর।
গির্জার সংলগ্ন জমিতে আর্মেনিও সমাধিও আছে। ১৮৯৪ সালে আবিষ্কৃত হওয়া একটি সমাধি কিন্তু কলকাতার ইতিহাসকে অনেকটা বদলে দিল। কার সমাধি? রেজাবিবির, যিনি ১৬৩০ সালের ১১ জুলাই মারা যান, তিনি ছিলেন চ্যারিটেবল সুকিয়ার স্ত্রী। তা রেজাবিবির মৃত্যুর সাল নতুন করে ভাবাল কলকাতার ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করা মানুষদের-১৬৩০ সাল! দু'দশক আগে পর্যন্ত 'কলকাতার জনক' হিসেবে পরিচিত জোব চার্নক যেন কবে প্রথম কলকাতায় এসেছিলেন? সালটা ১৬৯০ না? তারও ৬০ বছর আগে রেজাবিবির সমাধি আমাদের বলে দিচ্ছে, কলকাতাকে পুরোপুরি জানতে এখনও আমাদের অনেকটা বাকি।