পুরুষদের দাড়ি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কারও মতে, ক্লিন শেভন লুকেই সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় লাগে পুরুষদের। অন্যদিকে, আরেক মহলের মতে, পুরুষমানুষ সবথেকে বেশি সুন্দর ও যৌন আকর্ষণে পরিপূর্ণ, যখন সে দাড়ি রাখে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, দাড়ি মানুষের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। এই কারণে সহজে ত্বকের উপর সহজে বলিরেখা পড়ে না। পাশাপাশি রুক্ষ ত্বকের সমস্যা সহজেই এড়ানো যায়। শুধু তাই নয়, দাড়ি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির হাত থেকে ৯৫ শতাংশ রক্ষা করে। গালের দাড়ি থাকার ফলে মুখের ওপর পোরসের সমস্যা দেখা দেয় না। রোমকূপে ময়লা জমার সমস্যাও কমে যায়। ফলে ত্বকের উপর কোনও সমস্যা হয় না। এতে ত্বকের শুষ্কভাবও অনেক কমে যায়। বিশেষ করে শীতকালে! শীতের আমেজে ত্বক সবার আগে আর্দ্রতা হারাতে থাকে। কিন্তু গালে দাড়ি থাকলে এই সমস্যা সহজেই এড়ানো যায়। ত্বকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও সাহায্য করে। দাড়িতে ধুলো, বালি, ময়লা জমে যায়। ব্যাকটেরিয়া, বিষাক্ত পদার্থ মুখ বা নাকের ভিতর ঢুকতে পারে না। সহজেই ডাস্ট অ্যালার্জি, হাঁপানির ঝুঁকি এড়ানো যায় না
দাড়ি ভাল কি খারাপ, আকর্ষণীয় নাকি ততটা আকর্ষণীয় নয়- তা নিয়ে বিতর্কের আসলে কোনও শেষ নেই! তবে, দাড়ি নিয়ে যত আলোচনা সিনেমা, সাহিত্য কিংবা বাস্তব জীবনে- সেটিকে নিশ্চিতভাবে একটি বাঁকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে 'নো শেভ নভেম্বর' ট্রেন্ড। এই ট্রেন্ড শুরু হওয়ার পর থেকেই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল। এর নেপথ্যে দুটো কারণ আছে। প্রথমত, এই ক্যাম্পেনের অতি পরিচিত দিকটা- গোটা নভেম্বর মাস জুড়ে চুল এবং দাড়ি না কাটা। দ্বিতীয় এবং গভীর দিকটা হল- ক্যানসার আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য শুরু হয়েছিল এই ট্রেন্ড।
চুল এবং দাড়ি না কেটে মাসজুড়ে সেখান থেকে বাঁচানো অর্থ ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেওয়াই আসল উদ্দেশ্য। পুরুষদের হাত ধরে শুরু হলেও এখন এই 'নো শেভ নভেম্বর' ট্রেন্ডে মিশে রয়েছে লিঙ্গনির্বিশেষে বহু সচেতন ও সংবেদনশীল মানুষের সমান ও নিরন্তর উৎসাহ।
এই গোটা মাস জুড়েই পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ও টেস্টিক্যুলারের মতো ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। তবে, শুধু চুল বা দাড়ি না কেটে সেই অর্থ দিয়ে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসাই নয়। আপাতদৃষ্টিতে এই ব্যাপারটিকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, তা কিন্তু একেবারেই নয়! শেষ এক দশকে মোট ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ উঠে এসেছে একমাসব্যাপী চলা এই বিশ্ববন্দিত ট্রেন্ডের মাধ্যমে।
২০০৭ সালে শিকাগোতে প্রয়াত হন ম্যাথু হিল। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভদ্রলোক। তাঁর আটজন পুত্র-কন্যা একজোট হয়ে ২০০৯ সালে প্রথম এই ক্যাম্পেন শুরু করেন। ক্যানসার রোগীদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ করাই ছিল যে ক্যাম্পেনের মূল উদ্দেশ্য। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেন পনেরো বছর হবে ২০২৪ সালে। যা শুরু হয়েছিল পাশ্চাত্যে, ইন্টারনেটের যুগে প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তেও বেশি দেরি হয়নি। এই বাংলাতেও প্রতি বছর বহু মানুষ এই ক্যানসার-সচেতনতা বৃদ্ধি ট্রেন্ডে সোৎসাহে অংশগ্রহণ করেন।
দাড়ি বা চুল রেখে বহিরঙ্গের সৌন্দর্য কতটা বাড়ে বা বাড়বে, তা তো বিতর্কের বিষয়। তবে, এই ট্রেন্ডের মূল ভাবটির সঙ্গে সহমত হয়ে মহাপরাক্রমশালী কর্কট রোগাক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাটি যে আসলে অন্তরের ঐশ্বর্যকেই বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ, সে কথাও বলাই সঙ্গত।