নতুন গাড়ি কেনা মানেই কিছু মানুষের কাছে স্বপ্নপূরণ। একটা সময় গাড়ি কেনা মানে ছিল পাহাড়সমান টাকার ধাক্কা। কিন্তু এখন সে কাজ বিশেষ কষ্টসাধ্য নয়। বরং গাড়ি এখন রোজকার প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। আর আজকাল থোক টাকা না থাকলেও লোন এবং EMI-এর সুবিধা থাকায় আরও সহজ হয়ে উঠেছে গাড়ি কেনার পরিকল্পনা। তাই অনেকেই নতুন চাকরি পেয়েই গাড়ি কেনার কথা ভাবেন। কিন্তু বাজারে এত গাড়ির মধ্যে কোন গাড়িটা কিনবেন? আর সল্প আয়ে EMI বা কীভাবে ম্যানেজ করবেন সেই চিন্তা কিন্তু থেকেই যায়। তাই গাড়ি কিনবেন আর EMI কীভাবে ম্যানেজ করবেন রইল তার প্রাথমিক নীলনকশা।
অনেকেই লোনে গাড়ি কিনবেন ভেবে দামি গাড়ি কিনে ফেলেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তী কালে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের EMI দেওয়ার কারণে তাদের বাজেটে গোলমাল হয়। পার্সোনাল লোন নিতে হয় এমনকি কোনও এমারজেন্সি পরিস্থিতি হলে মুশকিলে পড়তে হয়। তাই নতুন বছরে ঝকঝকে গাড়ি বাড়িতে নিয়ে আসার আগে মাথায় রাখুন এই দরকারি কয়েকটা পয়েন্টস।
ব্যাঙ্ক লোন
ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে প্রথমেই ব্যাঙ্কে চলে যান। এক্ষেত্রে একটি ব্যাঙ্ক নয়, একাধিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলুন। এরপর সবচেয়ে কম সুদ দিতে হয় এমন কার লোন বেছে নিন। তার পর সেই লোনের পরিমানের সঙ্গে আপনার বার্ষিক বাজেটের পরিকল্পনা করে তারপর গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিন।
বার্ষিক আয়
আপনার বার্ষিক আয় যত টাকা, সবসময় বার্ষিক আয়ের ৫০ শতাংশ দামের গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ধরুন আপনার বার্ষিক আয় যদি ১২ লক্ষ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে আপনার উচিত ৬ লক্ষ টাকার মধ্যে কোনও গাড়ি কেনা। এই নিয়ম মানলে আপনার বাজেটে কোনও সমস্যা হবে না।
ডাউন পেমেন্ট
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আপনার গাড়ির দাম যদি ৬ লক্ষ টাকা হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে মোট দামের ২০ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্ট করতে হবে। এখানে ৬ লক্ষ টাকার গাড়ি কিনলে আপনাকে ডাউন পেমেন্ট করতে হবে ১ লক্ষ ২০ হাজার।
এবার আপনার যদি আগে থেকে গাড়ির ডাউন পেমেন্টের জন্য বেশি টাকা জমানো থাকে তাহলে ডাউন পেমেন্ট একটু বেশি করবেন। এক্ষেত্রে আপনার লোনের বোঝা কিছুটা কম হবে। তা না হলে ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট করুন। কিন্তু ২০ শতাংশের কম করবেন না। এক্ষেত্রে বাজেটে প্রভাব পড়বে।
EMI-এর পরিমাণ
ধরা যাক আপনি ২০ শতাংশই ডাউন পেমেন্ট করেছেন। সেক্ষেত্রে আপনার লোন থাকছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এর উপর রয়েছে সুদের হার। ধরা যাক কোনও ব্যাঙ্ক থেকে আপনি ৯.২ শতাংশ হারে লোন নিয়েছেন। এবার লোনের মেয়াদের সঙ্গে আপনার সুদ এবং EMI-এর পরিমাণ যোগ করে দেখুন বাজেটের মধ্যে রয়েছে কিনা।
ধরা যাক ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার উপর ৯.২ শতাংশ হারে যোগ করে আপনাকে প্রতিমাসে EMI দিতে হচ্ছে ১১ হাজার ৯৯০ টাকা। এবার এই পরিমাণ আপনার বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখলে নির্দ্বিধায় গাড়িটা কিনে ফেলতে পারেন। তবে, উপরোক্ত বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
লোনের দিকটা মিটে গেলেই এবার চিন্তা আসে কোন গাড়ি কিনবেন। গাড়ির বাজারে রয়েছে চোখ ধাঁধানো অপশন। কোনটা নেবেন, কোনটা নেবেন না এই চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। তার উপর সামনেই নতুন বছর। একাধিক গাড়িতে বড় বড় অঙ্কের ছাড় মিলবে। ফলে আপনি বাজেট অনুযায়ী সহজেই কোন কোম্পানির গাড়ি কিনবেন তা ঠিক করতে পারবেন। কিন্তু গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সেগুলি কী? দেখে নিন একনজরে।
ভাল করে রিসার্চ
প্রথম গাড়ি কেনার আগে ভাল করে রিসার্চ করে নেওয়া দরকার। কোন মডেলটি আপনার জন্য ভাল হবে সেটা বুঝে গাড়ি কেনা উচিত। কী কী ফিচার্স আপনি চাইছেন সেটি দেখে নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে সেফটির বিষয়টিও নজরে রাখা উচিত। তাছাড়া কোন এলাকায় আপনি থাকেন সেই এলাকার রাস্তা-ঘাট অনুযায়ী আপনি কোন গাড়ি কিনবেন তা বাছাই করতে পারেন।
গাড়ির ওয়ারেন্টি
সব গাড়িরই ওয়ারেন্টি থাকে। কিন্তু আপনি যে গাড়িটি পছন্দ করেছেন সেই গাড়িটির ওয়ারেন্টি কত দিনের সেটি জেনে নিন। প্রয়োজনে ওয়ারেন্টি এক্সটেন্ড করে নিন। কারণ গাড়ি কেনার পর এমনিই বাজেটের বিষয়টি থেকে যায় তার উপর কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়াও যে সব গাড়ির পার্টস বাজারে সহজলভ্য, সেই গাড়িগুলিকেই পছন্দের তালিকায় এগিয়ে রাখতে পারেন।
টেস্ট ড্রাইভ
যে গাড়ি কিনবেন ভাবছেন, ওই গাড়ি কেনার আগে টেস্ট ড্রাইভ করে নেওয়া খুবই জরুরি। একবার টেস্ট ড্রাইভ নিলে আপনিও বুঝতে পারবেন গাড়ি চালাতে কীরকম অভিজ্ঞতা হবে। একই সঙ্গে গাড়ির পারফরম্যান্স কেমন হবে তাও বুঝতে পারবেন।
পেট্রল নাকি ডিজেল
পেট্রল গাড়ির দাম ডিজেল গাড়ির দামের তুলনায় অনেক কম। তবে, পেট্রোলের দাম কিন্তু ডিজেলের থেকে বেশি। অন্যদিকে পেট্রোল গাড়ির তুলনায় ডিজেল গাড়ির মেনটেন্যান্স কিছুটা বেশি। তাই গাড়ি কেনার আগে এই বিষয়টা যাচাই করে নেবেন।
মাইলেজ
গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই মাইলেজের ব্যাপারটা দেখে নেবেন। আপনি যে গাড়িটি কিনছেন ১ লিটার পেট্রলে সেটি কত কিলোমিটার যাচ্ছে তা জেনে নেওয়া ভাল। কারণ আপন গাড়ির মাইলেজ বেশি হলে তা সরাসরি আপনার তেল খরচ কমিয়ে আনবে। তাই পকেটে বাড়তি বোঝা না চাপাতে চাইলে এই বিষয়টি যাচাই করে তবেই গাড়ি কিনুন।