প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা অন্যতম শীর্ষ বামপন্থী নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৮০ বছর বয়সে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে এই রাজ্যের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের অবসান হল। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভ্রাতুষ্পুত্র বুদ্ধদেবের শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে উত্তর কলকাতায়। বামপন্থী আবহে বড় হয়েছেন তিনি। পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যে পাঁচজন তরুণ বামপন্থী ছাত্র-যুব নেতাকে প্রায় হাতে ধরে তৈরি করেছিলেন কিংবদন্তি সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত, তাঁদের অন্যতম ছিলেন বুদ্ধদেব। বিমান বসু ছাড়া তাঁদের সকলেই প্রয়াত। অনিল বিশ্বাস, সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তীরা আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চলে গেলেন এই পঞ্চরত্নের সবচেয়ে আলোচিত মানুষটি।
১৯৬৬ সালে সিপিএমের সদস্যপদ পান বুদ্ধদেব। অংশ নেন খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের প্রতি সংহতিজ্ঞাপন আন্দোলনে। ১৯৬৮ সাল থেকে টানা ১৩ বছর তিনি ছিলেন সিপিএমের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী যুব আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭২ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হন। ১৯৮২ সালে জায়গা পান দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে।
১৯৭৭ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট সরকার। কাশীপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্যোতি বসুর প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে। ১৯৮২ সালোর বিধানসভা নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন বুদ্ধদেব। ১৯৮৪ সালে তিনি স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। পরের বছর, ১৯৮৫ সালে হন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনি ছিলেন যাদবপুরের বিধায়ক। তথ্য সংস্কৃতি দফতর ছাড়াও সাময়িক ভাবে নগরোয়ন্ন এবং পর্যটন দফতর সামলেছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একাধিক অভিযোগ তুলে আচমকাই সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। কয়েক মাস পরেই আবার ফিরে আসেন ক্যাবিনেটে। ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের গুরুদায়িত্বও এসে পড়ে তাঁর কাঁধে।
১৯৯৯ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ৬ নভেম্বর, ২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন বুদ্ধদেব। ২০০২ সালে তিনি সিপিএমে পলিটব্যুরোর সদস্য হন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালপর্ব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। ২০০১ এবং ২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে বিপুল জয় পায় বামফ্রন্ট। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্লোগান তোলেন, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ'। তাঁর শিল্পায়নের উদ্যোগ সফল হয়নি৷ জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের শেষভাগ থেকে রাজ্যে শুরু হয় সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের আন্দোলন। ২০০৮ সালে জঙ্গলমহলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে বিস্ফোরণ হয়। তার প্রেক্ষিতে পুলিশি অথ্যাচারের অভিযোগ ওঠে৷ জঙ্গলমহলে শুরু হয় রক্তাক্ত লালগড় আন্দোলন। রাজ্যেরবক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকারের সমর্থনের ভিত ক্রমশ আলগা হতে শুরু করে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান ঘটে। যাদবপুরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে ১৬,৬৮৪ ভোটে পরাজিত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ক্রমশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কমতে থাকে। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৫ সালে সিপিএমের বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালে রাজ্য কমিটি এবং সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও সরে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০২২ সালে সমস্ত নেতৃত্বকারী পদ থেকে সরে যান তিনি। কেবলমাত্র পার্টি সদস্যপদ বজায় রাখেন।
২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন৷ কিন্তু সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন বুদ্ধদেব।
রাজনীতির ব্যস্ততা সামলে নিয়মিত লেখালিখি করতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর বই 'ফিরে দেখা' এখনও বেস্টসেলারের তালিকায় থাকে। চীনের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে তাঁর লেখা বইয়ের চাহিদা যথেষ্ট। নয়ের দশকে বুদ্ধদেবের 'দুঃসময়' অত্যন্ত সাড়া জাগিয়েছিল। আদ্যন্ত কাব্যপ্রেমী বুদ্ধদেব ছিলেন
মায়কোভস্কির অনুরাগী। একাধিক বই অনুবাদ করেছেন তিনি।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা অসম্ভব। তাঁর মৃত্যুতে নিঃসন্দেহে দরিদ্র হল বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন।
১৯৬৬ সালে সিপিএমের সদস্যপদ পান বুদ্ধদেব। অংশ নেন খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের প্রতি সংহতিজ্ঞাপন আন্দোলনে। ১৯৬৮ সাল থেকে টানা ১৩ বছর তিনি ছিলেন সিপিএমের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী যুব আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৭২ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হন। ১৯৮২ সালে জায়গা পান দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে।
১৯৭৭ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট সরকার। কাশীপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্যোতি বসুর প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে। ১৯৮২ সালোর বিধানসভা নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন বুদ্ধদেব। ১৯৮৪ সালে তিনি স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। পরের বছর, ১৯৮৫ সালে হন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনি ছিলেন যাদবপুরের বিধায়ক। তথ্য সংস্কৃতি দফতর ছাড়াও সাময়িক ভাবে নগরোয়ন্ন এবং পর্যটন দফতর সামলেছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একাধিক অভিযোগ তুলে আচমকাই সরকার থেকে পদত্যাগ করেন। কয়েক মাস পরেই আবার ফিরে আসেন ক্যাবিনেটে। ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের গুরুদায়িত্বও এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। ১৯৯৯ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।