একজন শীর্ণকায় বৃদ্ধ হেঁটে চলছেন। মুণ্ডিতমস্তক। হাঁটুর উপরে ধুতি। ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত। চোখে চশমা। তাঁর পিছনে হাঁটছেন কাতারের কাতারে মানুষ। আবালবৃদ্ধবনিতা। হাঁটছে গোটা ভারতবর্ষ।
বৃদ্ধের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। তেজস্বী বক্তৃতা করেন না। অথচ তিনি যেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। আগুনের দিকে যেমন ছুটে যায় অসংখ্য পতঙ্গ, তেমনই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর দিকে ছুটে গিয়েছিলেন কোটি কোটি পরাধীন ভারতবাসী।
ভারতীয় ছবিতে নানা সময়ে রুপোলি পর্দায় ধরা দিয়েছেন মহাত্মা, কখনো চরিত্র হিসেবে, কখনো তার আদর্শ নিয়েই তৈরি হয়েছে ছবি। বাপু জীর জন্মদিনে আজ সেরকম কিছু সিনেমা নিয়ে দু-চার কথা হোক।
গান্ধী, ১৯৮২
মহাত্মার জীবন নিয়ে তৈরি এই ছবি মোট ৮টি অস্কার জিতে নিয়েছিল। ব্রিটিশ পরিচালক রিচার্ড অ্যাটেনবরোর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল এই ছবি। গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা বেন কিংসলে। দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর অভিনয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলি থেকে ১৯৪৮ সালে তাঁর হত্যার ঘটনা পর্যন্ত গান্ধীর জীবনের বিভিন্ন পর্যায় ধরা ছিল এই ছবিতে।
হে রাম, ২০০০
গান্ধীর জীবন নিয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছবি ২০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'হে রাম'। এই ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটি গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের আদলে তৈরি একটি চরিত্রের উপর আলো ফেলেছে৷ কাল্পনিক সেই চরিত্রের নাম সাকেত রাম। দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু হওয়া এক কট্টরপন্থী হিন্দুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরিচালক কমল হাসান নিজেই। সাকেত রামের স্ত্রী মুসলিমদের দ্বারা ধর্ষিতা এবং খুন হন। এই সবকিছুর জন্য সাকেত দায়ি করেন গান্ধীকে। এবং তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। নাসিরুদ্দিন শাহ এই ছবিতে গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান এবং রাণী মুখার্জিও।
গান্ধী মাই ফাদার, ২০০৭
জাতীয় পুরস্কার জয়ী এই ছবির বিষয়বস্তু মহাত্মা এবং তাঁর সন্তান হীরালাল গান্ধীর সম্পর্কের টানাপোড়েন। হীরালাল বিশ্বাস করতেন, গান্ধী জাতিরআপিতা হতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তাঁর পিতা হিসাবে তিনি ব্যর্থ। হীরালালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয় খান্না। গান্ধীর চরিত্রে দর্শন জরিওয়ালা।
লাগে রহো মুন্নাভাই, ২০০৬
২০০৬ সালের লাগে রহো মুন্নাভাই মূলধারার অন্যতম জনপ্রিয় ছবি, যার উপজীব্য গান্ধীর আদর্শ। মহাত্মার জীবনের কথা এই ছবিতে তেমন নেই। রয়েছে মহাত্মা যে আদর্শে বিশ্বাস করতেন, সেগুলির উল্লেখ। এই সিনেমা নিঃসন্দেহে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল গান্ধীর আদর্শ। 'গান্ধীগিরি' শব্দটি জনপ্রিয় হয় এই সিনেমা থেকেই। সঞ্জয় দত্ত অভিনয়,করেছিলেন 'গ্যাঙস্টার' মুন্নাভাইয়ের চরিত্রে। যে হ্যালুসিনেট করত মহাত্মাকে। অত্যন্ত মজার এই ছবি গান্ধীর আদর্শকে সহজ ভাবে বুঝতে অত্যন্ত সহায়ক।
ম্যয়নে গান্ধী কো নহি মারা, ২০০৫
২০০৫ সালের এই ছবি একটি সাইকোলজিক্যাল ড্রামা৷ অনুপম খের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। উত্তম চৌধুরী নামে ওই অধ্যাপক নিজেকে মহাত্মার খুনের জন্য দায়ি করতে থাকেন। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনুপম খের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।