চলছে লোকসভা নির্বাচন। হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। তার পরেই জানা যাবে দেশ চালনার ক্ষমতা কার হাতে যাবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা একাধিক ইস্যু নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন। তারমধ্যে শেয়ার মার্কেট-এর প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ৪ঠা জুনের পর শেয়ার বাজারে রেকর্ড উত্থান হবে। এত বেশি ট্রেডিং হবে যে যাঁরা আপডেট করেন তাঁরা হাঁফিয়ে উঠবেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না, লোকসভা নির্বাচনের উপর ঠিক কতটা প্রভাব পড়বে শেয়ার মার্কেটে?
শেয়ার বিশেষজ্ঞদের মতে রাজনৈতিক যুদ্ধের আঁচ পড়বে স্টক মার্কেটের উপর। চলতি লোকসভা নির্বাচনে দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছিল ১৬ মার্চ। সেই দিন থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সাড়ে ৩ শতাংশেরও বেশি পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে সেনসেক্স। ভোট ঘোষণার দিন সেনসেক্স ছিল ৭২৬৪৩.৪২ পয়েন্টে। ২৩ মে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ হাজার ৪১৮.০৪ পয়েন্টে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত লোকসভা নির্বাচনগুলির মধ্যে ভোটগণনার দিনে শেয়ার মার্কেটে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছিল ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে। ২০০৪ সালে ভোট গণনার দিনেই সেনসেক্স এবং নিফটিতে একপ্রকার ধ্বস নেমেছিল। সেই বছর উভয় ক্ষেত্রেই ১০ শতাংশেরও বেশি পতন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যদিও ২০০৯ সালে চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সেই বছর ভোট গণনার দিন সেনসেক্স এবং নিফটিতে প্রায় ১৭ শতাংশেরও বেশি পয়েন্টে উঠেছিল বাজার।
নির্বাচনের পর বাজারের উপর প্রভাব?
নির্বাচনী ফলাফলের পরে বাজারের গতিবিধি নির্ধারিত হয় বিনিয়োগকারীদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের উপর। এবং বাজারের গতিবিধি বিনিয়োগকারীদের সম্পদের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। এর পাশাপাশি নতুন সরকারের তৈরি করা নীতির উপর কোনও স্টক কতটা প্রভাব ফেলবে তাও নির্ধারিত হয়।
নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে শেয়ার মার্কেট যে শুধুমাত্র দেশীয় বিনিয়োগকারীদের প্রাভাবিত করবে এমনটা কিন্তু মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও সেদিকে তাকিয়ে থাকবেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ভোটের প্রস্তুতি চলাকালীন এবং ভোট প্রচার চলাকালীন বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা সামনে আসে। তারপর ভোটফল প্রকাশের পরেও সরকার গঠন এবং সরকারের আগামী লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনাও প্রকাশ পাবে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, সেই সময় টানাপোড়েন থাকলেও সরকারের নীতিগুলি বিনিয়োগকারীদের পছন্দ হলে তাঁরা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করবেন। ফলে সূচকগুলি উর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এর উল্টোটাও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের ধারণা, সরকারি নীতিগুলি প্রত্যাশার চেয়ে অন্যরকম হলে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করবেন।
শুধু স্টক মার্কেট নয় লোকসভা নির্বাচনের প্রভাব পড়বে সোনার উপরেও। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী গতবছরের তুলনার চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সোনার চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে সেকারণে সোনাতেও বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না অনেকে। যদিও লোকসভা নির্বাচনের পর নতুন সরকারের নীতির উপর নির্ভর করে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।