সবে মাত্র চাকরি পেয়েছেন, অথচ নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে গিয়ে একেবারেই টাকা জমাতে পারছেন না। তাই নতুন বছরের শুরু থেকে নিজের বেতনের কিছুটা টাকা জমানোর পরিকল্পনা করছেন? তাহলে জেনে নিন একদম সহজ বিনিয়োগ সম্পর্কে। আজ আমরা জেনে নেব PPF অর্থাৎ পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমানোর উপায়। এই বিনিয়োগে মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টকগুলির মতো ঝুঁকি নেই। বরং এই নিয়োগের নিশ্চিত রিটার্ন রয়েছে। কাজেই সহজেই এই নিয়োগের উপরে ভরসা রাখছেন অনেকেই।
কী এই PPF?
পিপিএফ বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড হল কেন্দ্রিয় সরকারের একটি করমুক্ত স্কিম। যে বিনিয়োগে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পাওয়া যায়। এই অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন মাত্র ৫০০ টাকার। কেউ যদি এক বছরে ৫০০ টাকা জমা করেন তা হলেই প্রকল্প চালু থাকবে। সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ অর্থবর্ষে ১.৫ লাখ টাকা।
কত বছরের জন্য এই সেভিংস?
পিপিএফ হল একটি সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প, সঞ্চয়ের পাশাপাশি এই স্কিমে বিপুল সুদও পাওয়া যায়। এই স্কিমে টাকা রাখতে চাইলে আপনি ১৫ বছর থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত টাকা জমা করতে পারেন। এমনকি ১৫ বছর পর স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে আপনি আরও পাঁচ বছরের জন্য এই টাকা রাখতে পারবেন।
কীভাবে বিনিয়োগ করবেন?
এই স্কিমে যে টাকা আপনি রাখবেন, তা চাইলে একবারেও রাখতে পারেন, আবার প্রয়োজনে কিস্তি হিসেবে প্রতিমাসে ভাগ করে নিয়েও ব্যাঙ্কে জমা করতে পারেন। এই স্কিম ট্যাক্স সেভার। কারণ আপনি যদি এক বছরে দেড় লক্ষ টাকা জমা করেন সেক্ষেত্রে এটি কর ছাড় (80 C) -এর আওতায় পড়বে।
টাকা কীভাবে তুলবেন?
আপনার PPF-এর মেয়াদ শুরুর দিন থেকে তিন বছর হয়ে গেলেই আপনি জরুরি প্রয়োজনে লোন নিতে পারবেন। আর সাত বছর হয়ে গেলে জমানোর টাকার আংশিক তুলে নিতে পারবেন। আর ১৫ বছর হলে পুরো টাকা তুলে নিতে পারবেন।
পিপিএফ অ্যাকাউন্ট কারা খুলতে পারবেন?
যে কোনও ভারতীয় নাগরিক পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদের পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে, সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টটি অভিভাবকদের খুলতে হবে।
কত সুদ পাওয়া যায়?
পিপিএফের সুদের হার প্রতি তিনমাস অন্তর নির্ধারণ করে সরকার। বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বার্ষিক সুদের হার প্রায় ৭.১ শতাংশ। আর এই সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে নির্ধারিত হয়।
কীভাবে খুলবেন পিপিএফ অ্যাকাউন্ট ?
আপনার SBI, HDFC, ICICI কিংবা BOB-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
অনলাইনে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি
নেটব্যাঙ্কিংয়ে লগইন করুন। এবার অপশনে গিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট অপশন সিলেক্ট করে 'বিনিয়োগ' বা 'পরিষেবা' বিভাগে গিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলুন। এরপর প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করে আধার কার্ড, প্যান কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথির ডিজিট্যাল কপি আপলোড করে ন্যূনতম ৫০০ টাকা জমা করুন। এরপর কনফারমেশনের নথি ডাউনলোড করলেই আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
কীভাবে সুদের হার নির্ধারিত হবে?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যদি কোনও ব্যাক্তি প্রতি মাসে পিপিএফ অ্যাকাউন্টে দু'হাজার টাকা করে জমা করেন, বছরের শেষে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ হাজার। আর ১৫ বছরে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ১৫ বছর ধরে জমানো মোট টাকার উপর ৭.১ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাবে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যার ফলে বিনিয়োগকারী ১৫ বছর পর পিপিএফের মেয়াদ পূর্ণ হলে হাতে পাবেন মোট ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।