ফের আরও একবার ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ করা হবে। প্রতিটি রাজ্যে একটি করেই গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থাকবে। এমনটাই জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
বর্তমানে ১২টি রাজ্য মিলিয়ে ২৭টি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক রয়েছে। ওই সংখ্যা কমিয়ে ১২ করা হবে। অর্থ মন্ত্রকের তরফে এই সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে সেই বছরই প্রথম গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তৈরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত গ্রামীণ অর্থনীতিতে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই RRB তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও কো-অপারেটিভ ক্রেডিট স্ট্রাকচারের সমান্তরালভাবে আরও একটি চ্যানেল তৈরি করার উদ্দেশ্যও ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের।
কীভাবে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল?
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান, যে রাজ্যে ব্যাঙ্ক তৈরি করা হবে সেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সরকার এবং একটি পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক যৌথভাবে ব্যাঙ্ক গঠন করে। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ শতাংশ, রাজ্য সরকারের ১৫ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ শেয়ার থাকে সংশ্লিষ্ট পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক।
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের বিষয়ে RRB-র নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর রুরাল অ্যান্ড এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট বা NABARD-এর সঙ্গে আলোচনা করেছে অর্থ মন্ত্রক। জানানো হয়েছে, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে তিনটি RRB রয়েছে। সেগুলি হল পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক, UCO ব্যাঙ্কের পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। এই তিনটি ব্যাঙ্ককে সংযুক্ত করে একটি বড় RRBতৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং এই রাজ্যের ক্ষেত্রে স্পনসর ব্যাঙ্কের দায়িত্ব থাকবে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের উপর।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এবিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হলেও স্পনসর ব্যাঙ্কের মতামতের উপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে। সব জায়গা থেকে সবুজ সংকেত এলেই পরিকল্পনামতো কাজ শুরু হয়ে যাবে। ২০০৪ সাল থেকেই RRB-র সংখ্যা কমাচ্ছে কেন্দ্র।
কেন সংযুক্তিকরণ করা হচ্ছে?
RRB-র সংযুক্তিকরণের পিছনে রয়েছে একাধিক যুক্তি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যার মধ্যে প্রধান উদ্দেশ্য অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক খরচ কমানো। ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলে খরচ অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকত্রিত হলে পুঁজির পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে ব্যাবসায়িক লেনদেন অনেকটাই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে ব্য়াঙ্কগুলিকে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করবে।
এছাড়াও গ্রাহক সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। একাধিক শাখা খোলার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করতে পারে পরবর্তীতে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্যই RRB তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও গ্রামীণ এলাকার মহিলারা যদি নতুন কোনও উদ্যোগ নেয় তার জন্যও সহায়তা করে RRB। ফলে মহিলারাও অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী হতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গোটা দেশের ২৬টি রাজ্য এবং ৩টি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল মিলিয়ে RRB-তে মোট ২১ হাজার ৯৯৫টি শাখা রয়েছে। ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ৩০.৬ কোটি এবং ২.৯ কোটি লোন অ্যাকাউন্ট রয়েছে।