কেন্দ্রীয় বাজেটে আয়কর নিয়ে স্বস্তি মধ্যবিত্তের। নতুন ট্যাক্স স্ল্যাব ঘোষণা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের। বার্ষিক উপার্জন ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় পাবেন করদাতারা। এর আগে সর্বাধিক বার্ষিক আয় ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করে ছাড় ছিল। গতবার বাজেটে আয়কর স্ল্যাবে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। এবার বাজেটে নতুন স্ল্যাব ঘোষণা হবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। নতুন কর কাঠামোতে যারা ট্যাক্স জমা দেন, তাদের জন্য স্বস্তি। আগামী অর্থবর্ষ থেকেই নতুন করব্যবস্থায় এই নিয়ম কার্যকর হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এদিন জানিয়েছেন, নতুন করকাঠামোয় ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জনে কোনও কর দিতে হবে না। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৭৫ হাজার টাকা গত অর্থবর্ষ থেকেই চালু হয়ে গিয়েছিল। সেটিই বহাল থাকছে। আগামী সপ্তাহে সংসদে পেশ হবে আয়কর বিল। সেই বিলে কী থাকবে, তার দিকে তাকিয়ে চাকুরিজীবীরা। প্রস্তাবিত বিলে এই নতুন করকাঠামোয় কিছু বাড়তি সুবিধা হবে কিনা, তাও জানা যাবে। এর পাশাপাশি বিমা ক্ষেত্রেও ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ ঘোষণা করা হল কেন্দ্রীয় বাজেটে। ফলে এবার বিমার ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থাগুলি এবার সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারবে। এর আগে ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য FDI লিমিট ছিল ৭৪ শতাংশ। এর ফলে ভারতীয় বিমা সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এই বাজেট কি আয়করদাতাদের জন্য বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে! অর্থনীতি বিশারদদের দাবি, কেন্দ্র দেশের অধিকাংশ করদাতাদের নতুন করকাঠামোয় আনতে চাইছে। এবার বাজেটে তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন করকাঠামোয় ১২ লক্ষ টাকা উপার্জনেই আয়কর দিতে হবে না। অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের সময় জানিয়েছেন, নয়া করব্যবস্থায় সব স্ল্যাব ও রেট বদল করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই নতুন সংস্কারের পর মধ্যবিত্তদের উপর থেকে করের বোঝা অনেকটাই কমবে। এই বাজেটে উপভোক্তাদের হাতে টাকা থাকবে। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে মানুষের সঞ্চয়ও বাড়বে, বাড়বে অনেক লগ্নি। পুরনো করব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। অর্থাৎ, যে করদাতারা এখন পুরনো কাঠামোতে ট্যাক্স জমা দেন তাঁদের স্ল্যাবই একই থাকছে
নতুন করব্যবস্থায় স্ল্যাব কেমন?
নতুন স্ল্যাবে শূন্য থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ে করের পরিমাণ হবে শূন্য। এর আগে এই স্ল্যাবে বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা উপার্জন করলেই আয়করের আওতায় পড়তে হত। এবার তা এক লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর পরের ধাপে ৪-৮ লক্ষ টাকা বার্ষিক উপার্জনে ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। ৮-১২ লক্ষ টাকা বার্ষিক উপার্জনকারীদের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। ১২-১৬ লক্ষ টাকা বছরে আয় হলে কর হবে ১৫ শতাংশ। তবে এই ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাদের আয়, তাদের একটা সুবিধা দেওয়া হবে।
কীভাবে পাবেন সেই সুবিধা!
এতদিন পর্যন্ত ৭ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয় হলে কোনও কর দিতে হত না উপার্জনকারীকে। এবার ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা যাদের আয়, তারাও সুবিধা পাবেন। কিন্তু কীভাবে। ধরে নেওয়া যাক, আপনার বছরে আয় ৮ লক্ষ টাকা। আগে ৩০ হাজার টাকা কর দিতে হত। এবারও সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা ছাড় থাকবে। একই রকম ভাবে ৯ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয়ে ৪০ হাজার টাকা ছাড়, ১০ লক্ষ টাকা আয়ে ৫০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ১১ লক্ষ টাকা ও ১২ লক্ষ টাকা উপার্জন হলে এই নতুন নিয়মে লাভবান হবেন চাকুরিজীবীরা। যাদের বার্ষিক উপার্জন ১২ লক্ষ টাকা, তারা ছাড় পাবেন ৮০ হাজার টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনে আগে ৫০ হাজার টাকা ছাড় ছিল। তাই ১০ টাকা লক্ষ টাকা বছরে আয় করলেও নতুন করকাঠামোতে সুবিধা হত করদাতাদের। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যে নতুন করকাঠামো বাজেটে পেশ করেছেন, সেখানে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তার ফলে নতুন করকাঠামোর সুবিধা ছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের অঙ্কেও ছাড় পাবেন করদাতারা।
সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যও বড় ঘোষণা হয়েছে বাজেটে। বাজেট পেশের সময় নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের বাজেটে টিডিএস ব়্যাশনালাইজ়ড করা হবে। ফলে করদাতারা স্বস্তি পাবেন। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সুদের উপর ট্যাক্স ডিডাকশনের সীমা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর এই সীমা ছিল ৫০ হাজার টাকা। এবার তা এক লক্ষ টাকা করা হচ্ছে। বাড়িভাড়ার টিডিএসও বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।