তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে এগিয়ে গেল কলকাতা। তথ্য প্রযুক্তি দফতর থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে কলকাতায় IT সেক্টরের বৃদ্ধি হয়েছে বার্ষিক ৭০ শতাংশ হারে। অনেক পুরনো অফিস যেমন রয়েছে তেমনই একাধিক বৈদেশিক সংস্থাও কলকাতায় নিজেদের অফিস খুলেছে।
ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কলকাতায় তথ্য প্রযুক্তি শিল্প বৃদ্ধির জন্য রাজ্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিস এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি যৌথভাবে একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই দুটি সংস্থার আপাতত লক্ষ্য কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি হাব তৈরি করা।
এদিকে নতুন বছরের শুরুতেই নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত হবে বিশ্ব বাংলা সম্মেলন। উপস্থিত থাকবেন দেশ-বিদেশের একাধিক বড় সংস্থার কর্তারা উপস্থিত থাকবেন। তার আগেই আরও কিছু সংস্থা তাদের নিজেদের অফিস চালু করতে পারে কলকাতায়।
কলকাতায় কোন কোন সংস্থার অফিস রয়েছে?
বিগত কয়েক বছরে একাধিক নামী দামী সংস্থা কলকাতায় তাদের অফিস খুলেছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে EY। বিগ ফোর সংস্থার তালিকায় রয়েছে EY এর নাম। ইতিমধ্যে সল্টলেক সেক্টর ৫-এ তাদের একটি অফিসে কাজকর্ম শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে নিউটাউন শিল্পতালুকে সম্প্রতি চালু হয়েছে ইনফোসিসের নতুন অফিস। চলতি বছরের ১০ জুলাই উদ্বোধন হয় ওই ক্যাম্পাসের। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, ওই অফিস তৈরিতে রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন সহায়তা করা হয়েছিল। এছাড়াও নিউটাউন ও সেক্টর ৫-এ গত একবছরে একাধিক ছোটো বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা তাদের অফিস তৈরি করেছে। যা রাজ্যের আর্থিক উন্নতিতে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠক কলকাতায় সেমি কন্ডাক্টার কারখানা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়। গ্লোবাল ফাউন্ডারিজ নামে একটি সংস্থা কলকাতায় ওই কারখানা তৈরি করবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এই কারখানা তৈরি হলে আরও সংস্থা যেমন কলকাতায় অফিস খুলতে আগ্রহী হবে তেমনই কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে।
শহর কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বৃদ্ধির ফলে শুধু যে বড় সংস্থাগুলি লাভবান হচ্ছে এমনটা নয়। একাধিক ছোটো সংস্থাও কলকাতায় তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করছে। ব্লু কুকুন সংস্থার MD এবং CEO শান্তনু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থা মূলত AI সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে। এছাড়াও বিভিন্ন ইন্টারনেট অন থিঙস বা IoT ইন্টিগ্রেশন এবং ক্লাউড সার্ভিস দিয়ে থাকে। তাঁর বক্তব্য, AI ক্ষেত্রে চাহিদার ব্যাপক বৃদ্ধি সম্ভব। এছাড়াও আরও উন্নততর যোগাযোগের জন্য IoT-র চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে তারা এবং আরও অন্য সংস্থা কলকাতার পাশাপাশি বিদেশেও ব্যবসা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে।
একই দাবি করেছেন ডিসট্রনিক্স সংস্থার সহকারী প্রতিষ্ঠাতা রোহিত সরকার। তাঁর দাবি, কলকাতা শহরে বিগত বছরে তাদের সংস্থা প্রায় দ্বিগুন হারে ব্যবসা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। আগামী দিনে এই ধারা বজায় থাকবে বলেই মনে করছেন তিনি।
কলকাতায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের বৃদ্ধির অন্যতম অবদান সাইবার সিকিউরিটি সংস্থাগুলির। এমনটাই দাবি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিংয়ের কর্ণধার সন্দীপ সেনগুপ্তর। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় যেমন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বৃদ্ধি হয়েছে তেমন সাইবার সিকিউরিটি ক্ষেত্রেও জোয়ার এসেছে।
সম্প্রতি অ্যাসোচেমের একটি সভায় রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নতুন নীতি আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই নীতি সামনে এলে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।