চারচাকা থেকে শুরু করে হেভি ভেহিক্যাল, টাটা নামটাই যথেষ্ট। বিগত ২০ বছর ধরে চারচাকা গাড়ির জগতে বাকি সমস্ত ব্র্যান্ডকে এককথায় পিছনে ফেলে দিয়েছে টাটা মোটরস। যার কর্ণধার ছিলেন রতন টাটা।
শিল্পপতি গীতা পিরমল একবার রতন টাটা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,"সঠিক সময়ে সব জায়গায় আত্মপ্রকাশ করেছে টাটা। তাঁর চারপাশে কী ঘটছে সব নজর রাখতেন তিনি এবং সঠিক সময়ে প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন।" গীতা পিরমল যে ভুল কথা বলেননি তার প্রমাণ টাটা ইন্ডিকার আত্মপ্রকাশ।
১৯৯৮ সালের দিল্লির প্রগতি ময়দানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন রতন টাটা। দর্শক ঠাসা গ্যালারি। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে রতন টাটা বললেন, এমন কিছু আসতে চলেছে যা ভারতের বৃহৎ ট্রাক প্রস্তুতকারী সংস্থার ভবিষ্যৎ-ই বদলে দেবে।
সেই ঘোষণাতেই জানা যায়, টাটা লঞ্চ করতে চলেছে ইন্ডিকা। যেখানে মারুতি জেন এবং অ্য়াম্বাসেডরের মতোই জায়গা পাবেন ক্রেতারা। এবং ফুয়েল খরচ হবে মারুচি ৮০০-এর মতোই।
এরপর দিল্লিতেই আয়োজন করা হয়েছিল অটো এক্সপো। সেখানেই প্রথম আত্মপ্রকাশ করে টাটা ইন্ডিকা। তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী মুরাসয়েল মারান ওই গাড়ি উদ্বোধন করেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি টাটা মোটরসকে।
উদ্বোধনের পরের বছর থেকে টাটা ইন্ডিকার বুকিং শুরু হয়। প্রথম বুকিংয়েই ১ লাখেরও বেশি গাড়ির অগ্রিম বুকিং করেন সারা দেশের ক্রেতারা। তার কয়েক বছরের মধ্যেই বেস্ট সেলারের তকমা পায় টাটার প্রথম ওই চারচাকা। এরপর সংস্থার একাধিক নামী-দামী মডেল লঞ্চ করলেও এখনও ইন্ডিকার চাহিদা সর্বদা তুঙ্গে।
এরপর নতুন ভাবনাচিন্তা নিয়ে গাড়ি প্রস্তুতের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন রতন টাটা। উদ্দেশ্য ছিল, সব ভারতবাসীর হাতেই পৌঁছে যাবে নতুন গাড়ি। তারজন্য একলাখি গাড়ি বিক্রির পরিকল্পনা ছিল টাটা গ্রুপের। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়।
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে ১০০০ একর জমি টাটার হাতে তুলে দেয় তৎকালীন বাম সরকার। কিন্তু অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে টানা ২৬ দিন অনশন করেন তিনি। তারপর রাজ্য থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেন রতন টাটা। পরিবর্তে গুজরাতে ওই কারখানা হয়। এবং ২০০৯ সালে প্রথম লঞ্চ করে ১ লাখি গাড়ি, ন্যানো।
টাটার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২.৭৫ লাখেরও বেশি ন্যানো মডেল বিক্রি করেছে টাটা। যা একপ্রকার অনবদ্য এবং অভাবনীয় বলেও সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল।
প্যাসেঞ্জার গাড়ি বা স্বল্পমূল্যের গাড়ি তৈরি করেই যে থেমে ছিলেন এমনটা নয়। বিশ্বের অন্যতম এক্সপেনসিভ গাড়ি ব্র্যান্ড জ্যাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভারকেও অধিগ্রহণ করেছিল টাটা গ্রুপ। বর্তমানে পেট্রোল, ডিজেল এবং EV মিলিয়ে একাধিক মডেল প্রস্তুত করে টাটা।