ছবির কাজ শুরু আগেই তিনি কল্পনায় দেখতে পেতেন নিজের চরিত্রদের। সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এ কথা বহুবার জানিয়েছেন তাঁর ছবির কলাকুশীলবরা। সেই চরিত্রদের স্কেচ নিজে হাতে আঁকতেন খাতায়। বস্তুত, স্কেচ করার পর চরিত্রের জন্য প্রয়োজনীয় 'মুখ'টি পছন্দসই হয়ে উঠলেই তারপর তার জন্য শুরু করতেন অনুসন্ধান। ছবি (Satyajit Ray films) মুক্তি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চরিত্রদের দেখে বিস্ময়ে হতবাক হতেন দেশ-বিদেশের দর্শকরা।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বেছে নেওয়াই নয়। তাঁদের কোনও বিশেষ দৃশ্যের অভিনয়টি শিখিয়ে পড়িয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানোর মধ্যেই বোধহয় লুকিয়ে ছিল তাঁর পরিচালনার (Satyajit Ray direction) জাদু। যেমনটা চাইছেন ঠিক তেমনটাই অভিনেতাদের কাছ থেকে সুচারুভাবে বের করে আনার মধ্যেই নিহিত ছিল তাঁর জিনিয়াস। 'পথের পাঁচালী'র (Pather Panchali) চুনিবালা দেবী হোক, 'প্রতিদ্বন্দ্বী'তে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় হোক বা 'অরণ্যের দিনরাত্রি'তে সিমি গারেওয়াল- এই রুটিনের অন্যথা হয়নি একচুলও।
আরও পড়ুন: বলিউডে ফের বিচ্ছেদ, প্রেম ভাঙল সিদ্ধার্থ-কিয়ারার !
সত্যজিৎ (Satyajit Ray) এবং সৌমিত্র (Soumitra Chatterjee) কতটা কাছাকাছি ছিলেন, আমরা সকলেই জানি। এমনকি, 'গুপী গাইন ও বাঘা বাইন'-এর চিত্রনাট্য প্রথমবার শোনার পরে সৌমিত্র নিজে থেকেই গুপীর চরিত্রটি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, অথ ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও, সত্যজিৎ কিছুতেই রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত খুঁজে খুঁজে তপেন চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচন করেন তিনি। তার পরের কাহিনি জানি আমরা সকলেই।
তুলসী চক্রবর্তী ও রবি ঘোষকে একের পর যোগ্য চরিত্র দিয়ে গেছেন সত্যজিৎ (Satyajit Ray)। দুজনকেই আন্তর্জাতিক মানের অভিনেতা বলেই মনে করতেন। ‘পরশপাথর’-এ তুলসী চক্রবর্তীকে কে ভুলতে পারে! অন্যদিকে, 'জনঅরণ্যে' থেকে শুরু করে শেষ ছবি 'আগন্তুক' পর্যন্ত সত্যজিতের ছবিতে রবি ঘোষ ছিলেন প্রায় একচেটিয়া। প্রতিভাকে সঠিক ভাবে চিনে নিয়ে তাকে ব্যবহার করতে জানতেন তিনি।
জীবন থেকে গল্পের মানুষ খুঁজে খুঁজে বের করে সিনেমায় রাখতেন জীবনের প্রতিরূপ। এইভাবেই খুঁজে পেয়েছেন কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, কণিকা মজুমদার, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়দের। অল্পবয়সি সুবীর-উমা-কুশল-চন্দনাদের। এভাবেই ক্রিমিনাল ল'ইয়ার সন্তোষ দত্ত হয়ে উঠেছেন পর্দার কিংবদন্তি জটায়ু!