আর জি করের ঘটনার পর থেকে হাসপাতালগুলিতে 'থ্রেট কালচার'-এর অভিযোগ উঠেছে । একই অভিযোগ এবার টলিউড অন্দরেও !কাজ দেওয়া হচ্ছে না, হেনস্থা করা হচ্ছে... গিল্ডের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন টলিউডের কেশসজ্জা শিল্পী । হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন । তবে এখন সুস্থ আছেন । বাড়িতেও ফিরেছেন । তবে, এই ঘটনায় গিল্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন টলিউডের পরিচালক থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা । রাস্তায় নেমে চলছে প্রতিবাদ । টলিউডের অন্ধকার জগৎটাকে সামনে নিয়ে আসছেন টলিউডের একাংশ । উঠে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ । ওই কেশসজ্জা শিল্পীর সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল, কী চলছে টলিউড অন্দরে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতা লেখেন, ওই শিল্পীর অসহায়তার কথা । কাজ না পেয়ে দিনের পর দিন অভাবের সঙ্গে তাঁর লড়াই করা । তাঁর দোষ শুধু ছিল, তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন । ভাস্বর লিখেছেন, 'ওকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল কারণ সে প্রশ্ন করেছিল কেন হেয়ার ড্রেসার গিল্ডে ভোট হল না এবং একই পদে সবাই বহাল রইল। তাই তাকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।' তারপর সাসপেনশন, কাজ না পাওয়া...একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিল্ডের বিশিষ্ট পদে বসে থাকা ব্যক্তিদের পায়েও ধরেছিলেন । ভাস্বর জানিয়েছেন, তিন মাস ফ্ল্যাটের বাইশ হাজার টাকা EMI দিয়েছেন গয়না বিক্রি করে । এরপর সাসপেনশন ওঠে কিন্তু সে কাজ পায় না । অভিনেতা লেখেন, 'যারা হেয়ার ড্রেসার গিল্ডের বিশিষ্ট পদে আছেন তাদের, হ্যাঁ ঠিক শুনলেন তাঁদের পায়ে ধরে এবং কান্নাকাটি করে বলে কাজ না দিলে সে মারা যাবে । এই কদিন আগে একটা মেগা সিরিয়ালে কাজ কনফার্ম করেও তারপর জানানো হয় তাকে বাদ দেওয়া হল । সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যার কথা ভাবে।' ভাস্বরের প্রশ্ন, প্রতিবাদ করলেই কি এভাবে শাস্তি দেওয়া হবে ? কাজ তো কারও সম্পত্তি নয়, তাহলে কাজ কেড়ে নেওয়া হবে কেন?
ভাস্বরের পোস্ট শেয়ার করেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ও । সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, অসভ্যতা ও নির্লজ্জতা গ্রাস করছে প্রতিদিন, অথচ মেনে নেওয়া প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন সবাই । পরিচালকের কথায়,'প্রশ্ন করা যাবে,প্রতিটা প্রশ্নের শাস্তি এক। পড়ুন, জানুন, কি পরিমাণ অসভ্যতা এবং নির্লজ্জতা গ্রাস করেছে আমাদের, তাও আমরা মেনে নেওয়া প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছি ।'
টলিউড অন্দরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেত্রী শতরূপা সান্যাল । কেশসজ্জা শিল্পীর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর লম্বা একটি পোস্ট করেছেন । তিনি লেখেন, '...গোটা বিশ্বে সিনেমা যেখানে এগিয়ে গিয়েছে, এঁরা (টলিউড) সেই প্রাচীন জমিদারী কায়দা, অশিক্ষা, বাহুবল ও থ্রেটের মধ্যযুগে পড়ে আছেন । এ দেশের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের কাজের(উপার্জনের) মৌলিক অধিকার দিয়েছে । কিন্তু, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভারী বয়ে গেছে সে সব অধিকারের কথা মানতে!' এরপরই কেশসজ্জা শিল্পীর ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি । তাঁর কথায়, 'এই ইন্ডাস্ট্রিতে সবারই কাজ পাওয়া ও টিঁকে থাকা অনিশ্চিত, তাই প্রবলের কাছে আপোষ করতে বাধ্য সব টেকনিশিয়ানরা ও প্রযোজকরা । প্রযোজকরা নানান মাৎস্যন্যায় দেখেও চুপ থাকেন ও অন্যায় হজম করেন বছরের পর বছর, কারণ তাঁদের বহু টাকার ঝুঁকি নিতে হয়। কেশসজ্জা শিল্পীরা কাজ পেল কি পেল না, তাদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ল কি চড়ল না, তারা মরলো কি বাঁচলো, তাতে কি অচলায়তনের পাথর গলে?'
টলিউডের বর্ষীয়ান চিত্র পরিচালকের ভবিষ্যদ্বাণী, এই অচলায়তন না ভাঙলে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ন্যাচারাল ডেথ কেউ আটকাতে পারবে না ।
অন্যদিকে, টলিউডের এই ঘটনায় প্রতিবাদ করছেন ডাক্তাররাও । জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে । বিবৃতিতে থ্রেট কালচারের বিষয়টি তোলা হয়েছে । লেখা হয়েছে,'সমাজের সর্বস্তরে এই ভয় দেখানো বা থ্রেচ কালচারের বিষবৃক্ষ বপন করা হয়েছে । আমরা আমাদের এক বোনকে হারিয়েছি, কিন্তু আমরা আর একজনকেও এই থ্রেট কালচারের শিকার হতে দিতে রাজি নই ।' সকলের কাছে থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছন তাঁরা ।
সুদীপ্তা জানিয়েছেন, মানসিক দিক থেকে ভাল নেই ওই কেশসজ্জা শিল্পী । ট্রমা থেকে বেরতো সময় লাগবে । নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । অভিনেত্রী চাইছেন, তনুশ্রী দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজে ফিরুন ।