তাঁর পরিচয় দুটো। পরিচালক এবং অভিনেতা। ক্যামেরার সামনে তাঁকে দেখেছেন বাংলার আপামর দর্শক। কিন্তু, তিনি, তথাগত মুখোপাধ্যায় নিজে, ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে দৃশ্যের ঘাত-প্রতিঘাতের ওপর নজর গিঁথে দিতেই যেন বেশি আগ্রহী। প্রবলভাবে বিশ্বাস করেন, শিল্পীসত্তা ও মানবসত্তা- একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বাস করেন, স্বপ্ন রঙিন হতে পারে, কেউ কেউ সেই বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখতেও পারে, তবে সকলেই নয়- কেউ কেউ। তাঁর কথা বলার অকপট ও সপাট ভঙ্গি আসলে কোথাও গিয়ে মনে করিয়ে দেয় স্পষ্টতার এপারে একা দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের কথাই। তাঁর যোধপুর পার্কের বাড়িতে এডিটরজি বাংলা'র (Editorji Bangla) মুখোমুখি হওয়ার পরেও সেই অবস্থান থেকে পাশ কাটিয়ে গেলেন না তথাগত মুখোপাধ্যায় (tathagata mukherjee)।
বাংলায় প্রথম সিঙ্গল শট সিনেমা (Single shot film) তৈরি করছেন তিনি। ছবির নাম- 'গোপনে মদ ছাড়ান'। কী কারণে এমন ভাবনা? তিনি জানান, 'একটা ননসেন্স সময়কে ধরতে চেয়েছিলাম। যে সময়টাকে ধরার জন্য একটা ননসেন্স ক্যামেরাওয়ার্ক দরকার ছিল। একটা ছন্নছাড়া, এলোমেলো ক্যামেরা ওয়ার্ক। ক্যামেরা ক্রমাগত পার্সপেক্টিভ বদল করছে। সেখানে মনে হয়েছিল, অডিও-ভিসুয়ালি এই গল্পের গতিটাকে একটা প্রাসঙ্গিকতা দেওয়ার জন্য পার্টিকুলারি এই প্রচেষ্টাটা প্রয়োজন'।
তাঁর পড়াশোনা, লেখা এবং দেখা- কোনওটাই চারপাশের ছন্নছাড়া অবস্থাটি থেকে কখনওই মুখ ফিরিয়ে নেয় না। রূপঙ্কর বাগচীর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক এবং রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারি- নিজের মতপ্রকাশের ব্যাপারে তিনি সমান স্বচ্ছন্দ। একইসঙ্গে যা জরুরি, সেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য টাল খায় না কখনও। তাই 'সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে কথা বলার জন্য রোদ্দুর রায়ের গ্রেফতারি আমি সমর্থন করি না।' বলতে গিয়ে ভুরু কুঁচকে যায় না তাঁর।
তাঁর ছবি 'ভটভটি' রিলিজ করছে ১১ অগস্ট। সিনেমা হল পাওয়া নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক বিতর্কটি নিয়ে তিনি বলেন, 'ছবিটা যদি ভাল হয়, তাহলে শেষমেশ হল পাওয়া বা না পাওয়ার মতো ব্যাপারগুলো অনেক দূরে সরে যায়। ম্যাটারই করে না।'
আলো, বাতাস ও পায়রায় ঘেরা একটি বড় ঘরে বসে তিনি বলছিলেন, আমি যা দেখি এবং ঠিক যেটুকু দেখি, তার বাইরে আমার সিনেমা নয়। এই পায়রাগুলোও কোথাও গিয়ে আমার সিনেমার অংশ হয়ে যায় তাই। ওদের উড়ে যেতে দেখলে যে কী ভাললাগে!
বিনয় পাঠক ও বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর পরিচালিত হিন্দি ছবিও আসছে সম্ভবত এই বছরেই। প্রথম ছবি 'ইউনিকর্ন'। তাঁর একটি শর্ট ফিল্ম 'হাউ টু বিকাম আ রেপিস্ট'-এর শুরুতে ইংরেজিতে যা লেখা তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'এই ছবিটি দুর্বল হৃদয়ের মানুষদের জন্য নয়'। এই একই কথা প্রযোজ্য তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা-ভাবনার ক্ষেত্রেও। যা তিনি দেখেন এবং যা তিনি পর্দায় তুলে ধরেন বা ধরতে চান- সেখানে অনিবার্য তর্জনী হয়ে যেন দাঁড়িয়ে থাকে একটি প্রশস্ত হৃদয়ই।
'ভটভটি'-র পোস্টার ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে বিস্তর। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক জলপরীকে। নীল রঙের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে সে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে দিব্যি টের পাওয়া গেল, স্ট্যানলি কুব্রিকের এই ভক্তের কাছে আসল জলপরী সিনেমাই।