কিছু মানুষ ছায়ার মতো পাশে থাকেন, সঙ্গে থাকেন। সবসময় তাঁদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকে না, কিন্তু রক্তের সম্পর্কের ঊর্ধ্বেও কিছু সম্পর্ক হয়। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গেও এমন কিছু মানুষ বেঁধে বেঁধে থাকেন, তাঁদের রক্ষা করেন, আগলে রাখেন। বকলমে তাঁদের ‘দেহরক্ষী’ বলা হয়, কিন্তু তারকাদের কাছে ক্রমেই তাঁরা হয়ে ওঠেন ঘরের মানুষ। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, বনি সেনগুপ্ত-কৌশানি মুখোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিংবা কোয়েল মল্লিকের কাছে তাঁদের দেহরক্ষীরা পরিবার আত্মীয়র থেকে কম কিছু নয়।
'যব তক ম্যায় হু, তব তক ম্যায় আপকি সেবা করুঙ্গা।’- একবার এই অমোঘ উক্তি করেছিলেন সলমন খানের দেহরক্ষী। গুরমীত সিং জলি ওরফে শেরার এই উক্তি গত ২৯ বছর ধরে ভাইজানকে জুগিয়েছে সাহস। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে লরেন্সের টার্গেটে রয়েছেন সলমন খান । বারবার প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে সলমনকে । তারপর থেকেই মুম্বই পুলিশের তরফে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় । সুপারস্টারকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয় । তবে, এবার বাবা সিদ্দিকির মৃত্যুর পর বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বার্তায় আরও সতর্ক মুম্বই পুলিশ । সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে সলমন খানকেও । এতসবের মাঝে হঠাৎ ভাইরাল সলমনের দেহরক্ষীর এই উক্তি।
ঠিক এমনই, টলিপাড়ার তারকাদেরও ছায়াসঙ্গী হয়ে রয়েছেন রাম, দেবাশিষ, রাহুল, সুরজিৎ-এর মতো আত্মীয়রা। এই প্রতিবেদনে রইল টলিতারকাদের ‘রক্ষাকবচ’দের গপ্পো।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী রাম:
১৬ বছর ধরে স্যরজির সঙ্গে রয়েছেন রাম সিং। তিনি ‘ইন্ডাস্ট্রি’র ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী। তাঁকে ছাড়া এক পা চলেন না বুম্বা দা। কাঞ্চন-শ্রীময়ীর রিসেপশনে গাড়িচালক ও নিরাপত্তারক্ষীদের প্রবেশাধিকারকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে রামকে ঢুকতে না দেওয়ায় যারপরনাই আহত হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ নিজেও।
কীভাবে ইন্ডাট্রির দেহরক্ষী হলেন রাম?
এই সময়কে, তিনি জানিয়েছেন দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বাউন্সারের কাজ করতেন তিনি। এক সময় আয় বলতে ছিল দৈনিক ১৫০ টাকা। নিজের কাছে ৫০ টাকা রেখে, বাকি ১০০ টাকা মায়ের হাতে তুলে দিতেন রাম। আর আজ তিনি ‘ইন্ডাস্ট্রি’র ছায়াসঙ্গী।
আগে থেকেই বুম্বা দার দারুণ ফ্যান ছিলেন রাম। একদিন জানতে পারেন প্রসেনজিতের স্থায়ী বাউন্সার লাগবে। সুযোগ হাতছাড়া করেননি রাম। তাঁকেও কার্যত তুলোয় মুড়ে রাখেন স্বয়ং ‘ইন্ডাস্ট্রি’ । রাম জানান, ‘যেখানেই থাকি, যত শুটিংয়ের চাপ-ই থাকুক, ঠিক জিজ্ঞেস করেন খেয়েছি কিনা, বাড়ি কখন যাব। এটা আমার বড় পাওনা। তাই আমি দাদাকে সবসময় কাঁধে নিয়ে ঘুরি। যে-ই জিজ্ঞেস করে বলি দাদা আমার কাঁধে আছেন। জান চলে যাবে তবু দাদার কিছু হতে দেব না।’
কোয়েলের দেহরক্ষী সুরজিৎ কয়াল:
বিগত ৮ বছর ধরে কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে রয়েছে সুরজিৎ। তাঁর কাছে, কোয়েল ‘ম্যাডাম’ নন, বরং দিদি। দিদির দায়িত্ব পালন করেন কোয়েলও। সুরজিৎ-এর জন্মদিন ভোলেন না কোয়েল। কেক কাটিয়ে খাইয়ে দিতেও ভোলেন না। সুরজিৎ-এর কথায় মল্লিক বাড়ির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে তাঁর। নিজের দিদি আর কোয়েলের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই বলেও জানান সুরজিৎ। অন্যদিকে, কোয়েলের কাছেও তিনি একেবারে নিজের ভাই। বললেন, ‘কখনও ম্যাডাম বলে ডাকিনি। দিদি বলেই ডাকি যখন এটা তো বড় একটা দায়িত্ব। জীবন দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করি।’
কৌশানির দেহরক্ষী দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
বনি সেনগুপ্তর জন্য কাজ শুরু করেছিলেন দেবাশিস। তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে সকলে চেনে ট্যাটু দা হিসেবেই। বছর পাঁচেক ধরে তিনি কৌশানি মুখোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী। একটা সময় বাউন্সার ও বডিগার্ড হিসেবে জয়েন করলেও, এখন কৌশানির ব্র্যান্ড থেকে ইভেন্ট সবটাই সামলান তিনি। দিনের মধ্যে ১৬ ঘণ্টা তিনি কৌশানির সঙ্গেই থাকেন। কৌশানির ভোটের প্রচারেও তিনি পিছনে পিছনে ছিলেন। কৌশানি তাঁকে ভাই ফোঁটাও দেন প্রতিবার। দেবাশিস এই প্রসঙ্গে বলেন , ‘একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি। আমাকে ছাড়া দিদি কখনও কোথাও যায় না। আমি যতদিন এই পেশায় থাকব, দিদি ছাড়া আর কারও কাছে কাজ করব না।’