বলিউডে সাফল্যের মুখ দেখলে কারোর কারোর মাথা ঘুরে যায়, রাতারাতি স্টারডম ভর করলে মাটিতে পা পড়ে না। বিক্রান্ত মেসিরও সে সব হতে পারত, কিন্ত '১২ ফেল' অভিনেতার কেরিয়ার গ্রাফ যখন ঊর্ধ্বমুখী, সেই সময় তিনি কী করলেন? রুপোলি পর্দা থেকে অবসর ঘোষণা করলেন। কেরিয়ারের শিখরে থেকে অভিনেতা রাতারাতি অবসর ঘোষণা করতে পারেন, এমন আঁচটুকুও পাননি বিক্রান্ত ভক্তরা। এখনও দেশের নানা প্রেক্ষাগৃহে চলছে তাঁরই সিনেমা।
রবিবার গভীর রাতে ইনস্টার পাতায় স্বেচ্ছাবসরের কথা জানিয়েছেন বিক্রান্ত। সঙ্গে এও জানালেন, ২০২৫ সালে শেষ বারের মতো নতুন দু'টি ছবিতে দেখা যাবে তাঁকে। জানিয়েছেন, এবার সময়, ছেলে হিসেবে, স্বামী হিসেবে এবং বাবা হিসেবে পরিবারকে সময় দেওয়ার।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে গোধরা কাণ্ড নিয়ে তৈরি হওয়া ছবি 'দ্য সবরমতি রিপোর্ট'। সেই ছবির ট্রেলার সামনে আসার পর থেকে প্রাণ নাশের হুমকি পাওয়া বলি তারকাদের তালিকায় শাহরুখ-সলমনদের পাশাপাশি যে অভিনেতার নাম জুড়েছিল, তিনি বিক্রান্ত মাসে। সে ছবি মুক্তির আগে বিক্রান্ত, এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান, 'বিজেপি'-কে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, তাঁর।
যে বিক্রান্ত একসময় গৌরী লঙ্কেশ, উমর খলিদদের পোস্ট শেয়ার করতেন নিয়মিত, সেই বিক্রান্ত স্বীকার করেছেন, সময়ের সাথে সাথে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। শুভঙ্কর মিশ্রের একটি পডকাস্টে 'হাসিন দিলিরুবা' ছবির অভিনেতা জানিয়েছিলেন, কিছু কিছু ঘটনা, কিছু সামাজিক ইস্যুকে নিয়ে ভুল ধারণা ছিল তাঁর। শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে ভাবনা একই রয়েছে।
অভিনেতা হিসেবে নিজেকে ক্রমাগত ভেঙেছেন চুড়েছেন বিক্রান্ত মাসে। টেলিভিশনেই কেরিয়ার শুরু বিক্রান্তের, তারপর একে একে ওটিটি, বলিউড ছবি। এখন এক নামে তাঁকে চেনে গোটা দেশ। সংসারের হাল ধরতে একসময় কফিশপে চাকরি নেন বিক্রান্ত। জীবনের প্রথম অভিনয়ের প্রস্তাবটা এসেছিল শৌচাগারের লাইনে।
২০১৩ সালে বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে পরিচালিত ‘লুটেরা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় বিক্রান্তের। ওই ছবিতে রণবীর সিংহের প্রিয় বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার পরে ‘দিল ধড়কনে দো’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’-এর মতো ছবিতেও পার্শ্বচরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এককথায় বিক্রান্ত মাসেকে ভারতীয় সিনেমাচর্চার কেন্দ্রে রাতারাতি এনে বসিয়েছিল যে ছবি, তা হল '১২ থ ফেল'।
বলিউডে নড়বড়ে কেরিয়ার দাঁড় করাতে সময় লেগেছিল ঠিকই, তবে দুর্দান্ত অভিনয় প্রতিভা দিয়ে ঠিক নজর কেড়ে নিয়েছিলেন পরিচালক-দর্শকদের। সাফল্যের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে কেন অবসরের কথা ভাবলেন বিক্রান্ত? উত্তর নেই। কেউ কেউ বলছেন, সাফল্যের চূড়ায় ওঠা তো বাকি ছিল? এই সময় কেউ মাঠ ছাড়ে? অনেকেই অবশ্য বলছেন, মাঠ ছাড়ছেন না, এ সবই আসলে তাঁর পরের ছবি 'জিরো সে রিস্টার্ট' এর পাবলিসিটি স্টান্ট।
আর সেরকমটা যদি না হয়? তাহলে? সাফল্য তাঁকে চালাবে না, বরং তিনি সাফল্য, স্টারডমকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন, এ চিত্রনাট্য যেন লিখেই রেখেছিলেন বিক্রান্ত। তিনি প্রেডিক্টবল হবেন না, বরং হবেন 'ডেথ ইন দ্য গঞ্জ'-এর 'সটু'র মতো। কেউ তাঁর মনের নাগাল পাবে না। গল্পের শুরুতে তিনি শুধুই একটা চরিত্র, গুরুত্ব নেই তেমন। অথচ, শেষে, গল্পটা তাঁরই, 'সটু'-র অথবা পর্দার বাইরের জীবনের স্ক্রিনে, গল্পটা বিক্রান্তের।