৬ ফুট উচ্চতা, সুঠাম দেহ। মগজাস্ত্রে শান দেন নিয়মিত। বাঙালির মনে এই হল ফেলুদার চিরকালীন ইমেজ। এবার সেই ফেলুদার যদি চুলে পাক ধরে, চামড়া কুচকে যায়, মানে এককথায় ফেলুদা যদি বুড়িয়ে যায়, ভক্তদের কেমন লাগে?
গল্পের পাতায় ফেলুদা একইরকম থাকে। বয়স বাড়েনা জটায়ু তোপসেদেরও। কিন্তু বাস্তবের ফেলুদারা যে রক্ত মাংসের। তাঁদের জীবনে যৌবন পেরিয়ে মাঝবয়স এমন কী বার্ধ্যক্যও আসে। মানা কঠিন, কিন্তু সেটাই স্বাভাবিক। কালের নিয়মে ফেলুদার জুতোয় পা গলিয়েছেন বহু অভিনেতাই, কিন্তু ফেলুদা বলতে বাঙালির এককথায় কাকে মনে পড়ে?
প্রশ্ন তো সহজ, আর উত্তরও জানা। সব্যসাচী চক্রবর্তী। সাকুল্যে দুটি ফেলুদা করেছেন স্বর্গীয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। আট থেকে আশি, সত্যজিৎ সৃষ্ট ফেলুদা চরিত্রটি সববয়সী পাঠক-পাঠিকারই পছন্দের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙালি মজেছে ফেলুদাপ্রেমে। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের লেখা, ফেলুদাকে লাগাতার পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। বোম্বাইয়ের বোম্বেটে, গ্যাংটকে গণ্ডগোল, রয়েল বেঙ্গল রহস্য, গোরস্থানে সাবধান, কৈলাশে কেলেঙ্কারি- একাধিক ছবিতে বেণুই - ফেলু। আর পরিচালক সন্দীপ রায়। কিন্তু এক সময় সব্যসাচী জানিয়েছিলেন[, আর ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করবেন না তিনি। করেনওনি। বরং তিনি জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন নতুনদের।
ফেলুদাও ছাড়লেন তিনি, তারপর আর মনে রাখার মতো কোনও চরিত্রে তাঁকে দেখা গেল না। কেন? সব্যসাচী কি অবসরের কথা ভাবছেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, তিনি সম্প্রতি জানান তিনি অবসর গ্রহণ করতে চাইছেন কারণ তাঁর আর করার মতো চরিত্র নেই।
তার উপর, মাস কয়েক আগে বেজায় ভুগেছেন তিনি। বুকে বসেছে পেসমেকার। পাল্স ৩৪। ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন ৩ মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে। এক সময়ের চেইন স্মোকারকে ছাড়তে হয়েছে ধূমপানও। তেমনই কি ছবি করাও ছেড়ে দিচ্ছেন সব্যসাচী?
একের পর এক কাজ ফিরিয়ে দিচ্ছেন বেণু দা। প্রায় ২২টি হিন্দি ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। সব্যসাচী জানান, ফল এলেই তিনি সোজা বলে দেন এখন কাজ করছেন না। কাজ করবেন না মানে বাংলা হিন্দি কোথাওই করবেন না। যদিও, এতে বেজায় আপত্তি তাঁর পরিবারের। মসকরা করে সব্যসাচী জানান, এইজন্য নাকি তাঁকে স্ত্রীয়ের কাছে শুনতে হয় ‘খিটখিটে বুড়ো হয়ে বাড়িতে বসে থাকো’ । তবে সম্প্রতি একটি কাজ করছেন সব্যসাচী। কথা আগে দেওয়া ছিল তাই। ‘দেবী চৌধুরাণী’তে দেখা যাবে তাঁকে। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা জানান, ‘শুভ্রজিৎ খুব ভাল পরিচালক।প্রথমে রাজি হইনি। জোর করে আমাকে নিল। তার পর আটকে গেল ছবি ! আমার জন্য ওদের খুব ভুগতে হল।’
প্রাক্তন ফেলু নতুন সকলের কাজ দেখেছেন। আবীর, ইন্দ্রনীল এমনকি বাংলাদেশের ফেলুদাও দেখেছেন। তবে নিজের করা ফেলুদা দেখলে নাকি এখন তাঁর মনে হয় তিনি আরও ভাল কাজ করতে পারতেন, আবার কখনও মনে হয় খারাপ করেননি। তিনটি বই লিখে ফেলেছেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কোনোকালে লুকোছাপা করেননি ‘ফেলুদা’। লোকসভা ভোটের আগেও বামেদের প্রচারে মিটিং-এ দেখা গিয়েছে তাঁকে।
কিন্তু এখন নিজেকে যে বেশ খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোনও সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে তিনি নেই, থাকেন না ফোনের কাছাকাছিও। সময় কাটে সিনেমা দেখে, আগে খেলা দেখার সময় পেতেন না এখন ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস কিছুই বাদ দেন না। এভাবেই দিব্য সময় কাটছে বর্ষীয়ান ‘ফেলুদা’র। বয়সের ছাপ চোখে মুখে তাঁর, ধী-এর দাদু তিনি। গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে এখন এক্কেবারে ফ্যামিলি ম্যান সব্যসাচী চক্রবর্তী।