কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল নিয়ে নানা ধরনের সমীক্ষা হয়। ঠিক কোন কোন জায়গায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন কর্মচারীরা, সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, ক্রমে জন্ম নিচ্ছে তীব্র হতাশা ও তারপর অবসাদ যার ফলস্বরূপ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কাজে ও কেরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে- এই নিয়ে করা সাম্প্রতিক বেশ কিছু সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে রীতিমতো উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান। শিক্ষাক্ষেত্রে পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও হয়েছে এমন একাধিক সমীক্ষা যা প্রায় একইরকম উদ্বেগজনক। কিন্তু, যাঁরা আমাদের শরীর ও মনের চিকিৎসক, যাঁরা সারিয়ে তুলবেন সব অসুখ- সেই চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার খবর রাখে ক'জন?
জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের পক্ষ থেকে করা একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের মেডিক্যাল পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব স্থিতিশীল পর্যায়ে নেই।
এই অনলাইন সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, দেশের প্রতি ৪ জন এমবিবিএস পড়ুয়ার মধ্যে ১ জন কোনও না কোনও মানসিক ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করছেন। মেডিক্যালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়াদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জনের মাথায় বারবার আত্মহত্যার চিন্তা আসছে।
সমীক্ষা থেকে আরও একটি তথ্য উঠে এসেছে, যা একইরকম উদ্বেগজনক। জানা যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনওরকম সহায়তা নিতেও প্রস্তুত নন সিংহভাগ মেডিক্যাল পড়ুয়াই। এর নেপথ্যের একটা বড় কারণ হল, তাঁদের মনের ভিতরের সমস্যার কথা প্রকাশ্যে আসুক, তা তাঁরা চাইছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন বিঘ্নিত হতে পারে।
দেশের সর্বোচ্চ মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মোট ২৫,৫৯০ জন এমবিবিএস পড়ুয়া, ৫,৩৩৭ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়া এবং ৭,০৩৫ জন ফ্যাকাল্টির সদস্য।
তাঁদের মধ্যে, সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়েছেন ২৭.৮ শতাংশ এমবিবিএস পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে ১৬.২ শতাংশ পড়ুয়ার মধ্যে বারবার আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে।
যে কোনও ক্ষেত্রের পেশাদারদের মানসিক স্বাস্থ্যকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার জন্য কার্যকরী ব্রেক বা বিরতি খুব প্রয়োজন। টানা কাজ করার ফলে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনে ও স্বাস্থ্যে। এমন একটি পেশার সঙ্গে তাঁদের যুক্ত থাকতে হয়, যেখানে লম্বা বিরতি নেওয়া কার্যত অসম্ভব। কিন্তু, সমীক্ষা রিপোর্টে ইঙ্গিত, এমন কিছু বিরতি না থাকলে অবস্থা আরও সঙ্গীন হতে বাধ্য।
নিয়মিত ছুটি নেই। সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয় প্রত্যেককে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অন্তত ২,৪৩২ জন এই কথা জানিয়েছেন।
সমাজের অত্যাবশকীয় পরিষেবাগুলির মধ্যে চিকিৎসা সবথেকে শীর্ষে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশার দায়ভার যাঁদের বহন করতে হয়, যাঁদের সিদ্ধান্তের উপর অনেক সময়েই সরাসরি নির্ভর করে মানুষের জীবন ও মৃত্যু, তাঁরা যদি নিজেরাই সুস্থ না থাকেন, তাহলে কাজ করবেন কী করে? উন্নতমানের পরিষেবা দেবেন কী করে? প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের ডিউটি-আওয়ার্স কমানোর পক্ষে ইতিমধ্যেই সওয়াল করেছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। এই সমীক্ষা সেই সওয়ালকে আরও জোরালো করবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল।