পুজোর আর এক মাসও বাকি নেই । জোরকদমে পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বারুইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার । বনেদি বাড়ির আনাচে-কানাচে এখন শুধু পুজো পুজো মেজাজ । কোথাও প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে,রঙের প্রলেপ পড়ল বলে, কোথাও আবার গোল করে আলোচনায় বসছে বাড়ির মেয়ে-বউরা । পুজো নিয়ে চলছে নানারকম প্ল্যানিং । প্রায় ২৭৪ বছরের পুরনো এই বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোয় এখনও বজায় রয়েছে পুরনো নিয়মকানুন ও ঐতিহ্য । ১১৫৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থেকে জমিদার সহস্ররাম বন্দোপাধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে বারুইপুরের আদি গঙ্গা সংলগ্ন কল্যানপুরের বন্দোপাধ্যায় বাড়িতে বংশ পরম্পরায় দুর্গা পুজো হয়ে আসছে ।
রথের দিন থেকে কাঠামো পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় । প্রতিপদেই বসে ঘট । কুলপুরোহিতের সঙ্গে তন্ত্রধারক মিলে শুরু করেন চণ্ডীপাঠ । সেইদিন থেকেই পরিবারে মাছ ছাড়া মাংস, ডিম, পেঁয়াজ এসব কিছুই খাওয়া হয় না। চলে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত । মায়ের বোধন শুরু হয় দরমার বেড়া দিয়ে বেলগাছ ঘিরে। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, পুজার কয়েকটা দিন ফলকাটা থেকে শুরু করে নৈবেদ্য সাজানো সব কাজ বাড়ির ছেলেরাই করে । দীক্ষিত মহিলারাই পায় পুজোর ভোগ রান্নার অনুমতি ।
সপ্তমীর দিন মন্দির সংলগ্ন চাতালে যূপ কাষ্ঠে হয় পাঁঠা বলি । এছাড়া অষ্টমীর দিন ও সন্ধিপুজার সময় পাঁঠাবলির রীতি রয়েছে । এমনকি, নবমীর দিনও পাঁঠা ও শস্য বলি হয়ে থাকে । পুজোর কয়েকটা দিন মায়ের ভোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ । সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মাকে ভোগে নানাপদ মাছ, মাংস ,ডাল, খিচুড়ি সবই দেওয়া হয় । কিন্তু, দশমীর দিন মাকে পান্তা ভাত, কচু শাক দেওয়া হয় । কারণ, দশমীর দিন অরন্ধন হিসেবে পালিত হয়। সে দিন রান্না হয় না ।
বর্তমানে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সদস্যরা কেউ থাকেন মুম্বই, কেউ ব্যাঙ্গালোরে আবার কেউ আমেরিকাবাসীও রয়েছেন । তবে, পুজোর সময় কয়েকটা দিন আবার সবাই একসঙ্গে হই হুল্লোড় করেন । পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষজনও মেতে ওঠেন বন্দোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজোয় ।