ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়েছেন বছর চারেক। এখন তো একটু বিশ্রাম করে, আরাম করে কাটানোর সময়। আর ৫ জন কাটানও এই ভাবেই। কিন্তু ৬৪ বছরের জয় কিশোর প্রধান, পেশাগত জীবন থেকে অবসর নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পাশ করলেন নিট!
লোকে বলে, বয়স বাড়লে উদ্যম কমে যায়। প্রচলিত এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীর্ঘ চাকরি জীবনের শেষে সময় নষ্ট করেননি জয় কিশোর। অবসরের পর দিন থেকে নিজের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য কঠিন অধ্যাবশায় শুরু তাঁর। উড়িষ্যাবাসী জয়কিশোরের কৈশোরের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার, কোনও কারণে স্বপ্ন সফল হয়নি তখন, তা বলে সুযোগ যখন এসেছে, তা নষ্ট করেননি তিনি। সুযোগ কবে এসেছে, একটু দেরিতেই, ৬০ বছর বয়সে। আর ৫ জন মানুষ যখন ভার্চুয়াল বাণপ্রস্থ কাটানোর কথা ভাবেন, তখন। আর ওই বয়সেই নিটের প্রস্তুতি নিতে কোচিং ক্লাসেও ভর্তি হন জয়কিশোর।
নিটে বসার জন্য বয়সের কোনও ঊর্দ্ধসীমা রাখেনি কেন্দ্র। সে কারণেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পেরেছেন ৬৪-এর 'তরুণ'। ২০২০ সালেই নিট পাশ করেছেন। সুন্দর সাঁই ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের দরজা খুলে গিয়েছে জয় কিশোরের জন্য।
এজ ইস জাস্ট আ নাম্বার, বহু প্রচলিত এই প্রবাদ যে কত সত্যি বারবার প্রমাণিত হয়েছে তা। এই সাম্প্রতিক অতীতেও এমন দু-একটা খবর আমাদের অবাক করে দিয়েছে।
আশি বছর বয়সে ঠিক কীভাবে সময় কাটান আপনার পরিচিতরা? কেউ বাগান করেন, কেউ নাতি নাতনির সঙ্গে সময় কাটান, কেউ আবার ঘুরতে যেতে ভালবাসেন। একাশি বছরের চই সুন হোয়ার শখটা একটু অন্যরকম। আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানে তাঁর সহপ্রতিযোগীদের বয়স অর্ধেকের অর্ধেক। অধিকাংশের বয়স কুড়ির কোঠায়। এই বয়সে চই স্বপ্ন দেখলেন, এমন স্বপ্ন, সমাজের চোখে যা দেখার বয়স তাঁর নয়। তাতে কী আসে যায়!
কোন বয়সে কোন রং মানায়? কোথায় গেলে পোশাকের দৈর্ঘ্য কতটা হবে, কোথায় শাড়ি পরবেন, কোথায় শর্টস, সেসব বিচার করার জন্য ফ্যাশন পুলিশেরা সদা মুখিয়ে থাকেন। সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় অলিখিত শর্তই থাকে বয়স। সে সবকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার চই সুন হোয়া। বয়স তখন ৭২, হাসপাতালে কর্মরত চইকে এক রোগী প্রথম বলেন, তিনি সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন।
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর চই-এর বাধা ছিল একটাই। মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার নিয়মে। এতদিন পর্যন্ত ২৮ বছর ছিল প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর বয়সের ঊর্ধ্বসীমা। সেই নিয়মও বাতিল হল। চই সুন প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বাছাই হননি, কিন্তু বেস্ট ড্রেসড এর মুকুট এসেছে তাঁর কাছে। ঠাকুমার এই অ্যাচিভমেন্টে সবচেয়ে খুশি কিন্তু চইয়ের দুই নাতি, যাদের বয়স ২৩ আর চব্বিশ। এমন 'কুল' ঠাকুমা আর কজনের হয়?
প্রায় অবসরের বয়সে এসে প্রথমবার অলিম্পিক্সে খেললেন চিলির টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তানিয়া জেং। তিনি আদতে চিনের খেলোয়াড়। নিজের দেশ ছেড়ে অল্পবয়সেই চিলিতে গিয়ে সেখানে টেবল টেনিস কোচের চাকরি করতে শুরু করেন। এক সময় অবসরও নেন। বিয়ের পর শুরু করেন ব্যবসা। বিবাহ সূত্রে নাম পরিবর্তন হয়ে তানিয়া হয়। তবে টেবল টেনিস থেকে দূরে থাকতে পারেননি কখনও।
কোভিড অতিমারির মাঝে সময় কাটানোর জন্য ফের টেবিল টেনিস ব্যাট হাতে কোর্টে নামেন তিনি। ততদিনে বয়স ৫০ ছাড়িয়েছে। এই বয়সে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলাই একটা অ্যাডভেঞ্চার। চিলির সরকারি ফেডারেশন সাদরে আমন্ত্রণ জানাল তাঁকে। সান্তিয়াগোতে আয়োজিত প্যান আমেরিকান গেমসে ব্রোঞ্জ জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পান ৫৭ বছরের তানিয়া।
মাতৃভূমির হয়ে অলিম্পিক খেলার স্বপ্ন ছিল জেং-এর। শেষ অবধি সেটা আর হয়নি। এখন তাঁর বয়স ৫৮। কিন্তু চিলির হয়ে অলিম্পিক খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর। ৫৮ বছর বয়সে প্যারিস অলিম্পিকের অন্যতম প্রবীণতম খেলোয়াড় জেং।