নিজের কাজকে ভালবাসেন দারুণ, কাজই প্যাশন। বলা যায় ওয়র্কোহলিক। তবু কীসের অভিমানে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন বেঙ্গালুরুর ৩৭ বছরের অধ্যাপক? কারণ, নিজেকে উজার করে দেওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর বেতন বাড়ছে না ইঞ্জিনিয়রিং কলেজের সহকারী অধ্যাপকের। হালে আবার ইপিএফ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান। নিজের ইস্তফাপত্রটি এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অধ্যাপক জানিয়েছেন, কেন চাকরি ছাড়ছেন, সেই প্রশ্নটুকু পর্যন্ত কেউ করল না তাঁকে।
অধ্যাপক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, বিগত ১০ বছর ধরে পূর্ব বেঙ্গালুরুর একটি ইঞ্জিনিয়রিং কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ২০১৯-এর পর থেকে ছবিটা অনেক পাল্টেছে। কলেজের অন্য তিনটি শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নতুন অধ্যক্ষ আসার পর। তারপর থেকে তাঁর বেতন বাড়েনি বলেও দাবি ওই অধ্যাপকের। পড়ুয়ারা তাঁর পড়ানোয় খুশি, নিজের টাকা খরচ করে কতবার NAAC-এর অ্যাক্রেডিশনের এন্ট্রি ফি, নানা প্রতিযোগিতার জন্য কলেজের তরফে এন্ট্রি ফি তিনি দিয়ছেন বলেও দাবি তাঁর।
ক্লাস শেষে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত কলেজে কাজ করেছেন, এমনকী রবিবারও কাজ করেছেন। অথচ মাইনে বাড়ার বেলায় জুনিয়রদের বেড়ছে, তাঁর ইপিএফ দেওয়া বন্ধ হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের ৩/৪ জন ঘনিষ্ঠদের বেতন বেড়েছে। তাঁর ডিএ উল্টে ১১৫ % থেকে কমে ৩০ % করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সেই অধ্যাপকের।
অভিমানে ইস্তফা দিয়েছেন, তারপরেও কেউ তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেননি, কেন চাকরি ছাড়লেন, সেই অভিমানও ব্যক্ত করেছেন প্রফেসর। সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্য অনেককেই পাশে পেয়েছেন তিনি। EPF না দেওয়া বেআইনি বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপককে সোচ্চার হতে বলেছেন অনেকেই।
এই প্রসঙ্গে আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়, সারা বিশ্বেই বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট। যোগ্যতায় ফারাক নেই। ডিগ্রিও এক। কখনও কখনও বেশিই। কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের তুলনায় অনেকটাই বৈষম্যের (gender discrimination) শিকার হন মহিলারা। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় এমন ছবিই সামনে এসেছে। যা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে লিঙ্গবৈষম্যের ভয়াবহ ছবি।
আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার (International Labour Organisation) রিপোর্ট থেকে এই ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছে। গত রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর এই রিপোর্টকে সামনে রেখে পালিত হয়েছ সমবেতন দিবস বা ইক্যুয়াল পে ডে। এই উপক্ষে বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ অভিযান শুরু হয়েছে। নজরে লিঙ্গ-সাম্য ও নারীর ক্ষমতায়ন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিজস্ব সংগঠন ‘ইউ উইমেন’ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
আইএলও-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট উদ্বেগ বাড়ানোর মতোই। তাতে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম উপার্জন করেন মহিলারা। গোটা বিশ্ব জুড়েই এই ছবি।
অশিক্ষার জন্য বা কম পড়াশোনার জন্য পিছিয়ে নারীরা-- এই ভুল ধারণা রয়েছে সমাজে। কিন্তু আসল কারণ হল, শিক্ষার অভাব নয়, লিঙ্গবৈষম্যর কারণেই কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন ভারতীয় মহিলারাও।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার একটি নতুন সমীক্ষাতেও দাবি করা হয়েছে, ভারতে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের নিয়োগে যে ব্যবধান দেখা যায়, ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে তার কারণ লিঙ্গবৈষম্য। পুরুষদের সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও বঞ্চিত হন নারীরা। কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে দেওয়া হয় নারীদের। সার্বিকভাবেই নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয় নারীরা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হন।