দুর্গাপুজো, লক্ষ্মী পুজোর পর এগিয়ে আসছে দীপাবলি। এই আলোর উৎসব শুরু হয় ধনতেরাসের মধ্যে দিয়ে। দীপাবলীর আগে তৃতীয়ার দিন পালিত হয় ধনত্রয়োদশী বা ধনতেরাস। ধনতেরস বা ধনত্রয়োদশী আসলে ধন-সম্পদের উৎসব। এই দিন দেবী লক্ষ্মী এবং ধনতেরাসের দেবতা কুবেরের পুজো করা হয়।
কয়েক বছর আগেও বাঙালিদের মধ্যে ধনতেরাস নিয়ে তেমন কোনও উন্মাদনা ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে৷ দেশের অন্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতাতেও মহাসমারোহে পালিত হয় ধনতেরাস।
ধনতেরাসের সম্পদের উৎসব:
ধন শব্দের অর্থ ‘সম্পদ’, তেরাস শব্দের অর্থ ‘ত্রয়োদশী’। কার্তিক মাসে কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতেই বাড়ির মঙ্গল কামনা, অর্থ চিন্তা দূর করতে ঘরে ঘরে ধনতেরাস পালন করা হয়। অনেকের মতে, ধনতেরাসে সোনা কিনলে সম্পদের দেবীকে লক্ষ্মী প্রসন্ন হন। এবং মনে করা হয় এতে গৃহস্থের শ্রীবৃদ্ধি হয়।
ধনতেরাসের পিছনে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস, পুরাণ:
কথিত রয়েছে, দুর্বাসা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয় লক্ষ্মীকে। তখন নাকি সাগরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন কমলা দেবী। এর পরে অসুরদের সঙ্গে লড়াই করে, সমুদ্রমন্থনের হাত ধরে দেবতারা ফিরে পান লক্ষ্মীকে।
এছাড়াও কথিত রয়েছে, রাজা হিমুর সন্তানের উপর অভিশাপ ছিল, বিবাহের চারদিনের মধ্যে সাপের কামড়ে তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। একথা জানতেন যুবরাজের স্ত্রী৷ তাই কিছুতেই স্বামীকে ঘুমোতে দেননি তিনি৷ জাগিয়ে রেখেছিলেন গানে, গল্পে। ঘরের বাইরে রাখা ছিল বিপুল পরিমাণে সোনা, রূপো।
যুবরাজকে নিতে যমরাজ যখন এলেন, তাঁর চোখ ঝলসে গেল সোনার ঔজ্জ্বল্যে। ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, যুবরাজকে গল্প শোনাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী। যমরাজও মুগ্ধ হয়ে গল্প শুনতে থাকে৷ প্রহরের পর প্রহর পেরোয়। রাত কাটে। যুবরাজকে আর নিয়ে যেতে পারেন না যমরাজ। তাঁর প্রাণ রক্ষা পায়। সেই আনন্দে পরের দিন পালিত হয় ধনতেরাস।
ধনতেরাসে ধাতু কেনা, কেবলই বিশ্বাস? নাকি বিজ্ঞানও রয়েছে?
সোনা-রুপো বা মূল্যবান ধাতু হল সবচেয়ে বিশ্বস্ত বিনিয়োগের মাধ্যম। তাই ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতেও এই দিন সোনা কিনতে পারেন।
এছাড়া ধনতেরাস উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানে মজুরির উপর চলে আকর্ষনীয় ছাড়। তাই এই দিন সোনা কেনা বুদ্ধিমানের কাজ।
কেন ধনতেরাসের দিন ঝাঁটা কেনার চল রয়েছে?
মৎস্যপুরাণ মতে ঝাঁটায় লক্ষ্মীর বাস। এদিন ঝাঁটা ঘরে আনা মানে বাড়িতে দেবী লক্ষ্মীর আগমন। এদিন ঝাঁটা কিনলে বাড়িতে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়। তবে লোকাচার মত বলছে ঝাঁটা দাঁড় করিয়ে নয় শুইয়ে রাখতে হয়। অনেকেই তাই ঝাঁটায় পা রাখলে প্রণাম করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে এই দিনটিকে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস হিসাবেও পালন করে আসছে আয়ুষ মন্ত্রক। হিন্দু পুরাণ মতে, সমুদ্র মন্থনের পর এক হাতল আয়ুর্বেদের বই, অন্য হাতে অমৃতের কলস নিয়ে উঠে আসেন ধন্বন্তরী। সেই কারণে এই দিনটিকে ধন্বন্তরী ত্রয়োদশীও বলা হয়।