কসমোপলিটান কলকাতার অলিতে গলিতে অনেক অনেক ভাগ। কোনওটা চিনে পাড়া, কোনওটা গুজরাতি মহল্লা, কোনওটা আবার দক্ষিণ ভারতীয়দের গলি। তেমনই বউ বাজার চত্ত্বরে কলকাতার অ্যাঙ্গলো পাড়া। বো ব্যারাক। ডিসেম্বরের শহরে, যখন কলকাতার বেকারিগুলোয় ম ম করে কেক কুকিজের গন্ধ, যখন পাড়ায় পাড়ায় জমে ওঠে গলি ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টনের আসর, দুপুর গড়ালেই যখন সূর্য ঢলে পড়ে অস্তাচলে, সেই সময়ে সারা বছরের ঝুল কালি মুছে সেজে ওঠে বো ব্যারাক। এই শহরের অ্যাঙ্গলো পাড়া।
লালবাড়ির চারদিকে বড়দিন-নতুন বছরের ক'টা দিন আলোর রোশনাই। উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। লালবাড়িকে পেছনে রেখে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায় ফি বছর! উৎসব ফুরলো? বো ব্যারাকের আলো নিভলে? তখন তো অন্ধকার! সে অন্ধকারে আমরা হাত ধরিনি তো ওঁদের। খোঁজ রাখিনি, ওদের মধ্যে কে ডমিনিক, কে অগাস্টিন, কে মারিয়া। খবর রেখেছি, আনন্দের, উদযাপনের এই একটা সপ্তাহ ছাড়া কী ভাবে কাটে ওদের একটা বছর, দু'টো বছর, গোটা জীবন? ওদের ঘরের নোনা দেওয়ালে কতোটা অভিমান জমে, এই শহর তার খবর রাখেনি।
আট-নয় দশক ধরে এই শহরের সহনাগরিক ওরা। অথচ, কলকাতার মানুষের কাছে ওরা এখনও 'আমরা' হয়ে উঠল না। এক একটা জীবনে আমরা বাঁচি কতো শত পরিচয় নিয়ে। এক এক পরিচয়ের গায়ে আলো এসে পড়ে এক এক সময়ে। অথচ ওদের জন্য রাখা শুধুই 'অ্যাঙ্গলো' জীবন, 'অ্যাঙ্গলো' যাপন। বড়দিনে, মনটা আর একটু বড় করি আমরা? বো ব্যারাকের রাস্তায় আর একটু আলো পড়ুক বছরজুড়েই। যাতায়াত থাক ঘনঘন।