বাংলার একেবারে ঘরের মিষ্টি, অথচ তার কিনা নামই হয়ে গেল মেম সাহেবের নামে। বুঝতেই পারছেন কোন মিষ্টির কথা বলছি, তার সঙ্গে কোন মেমের। হ্যাঁ, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং-এর স্ত্রী লেডি ক্যানিং এর কথা বলছি। মিষ্টিটা হল, লেডিকেনি। স্ত্রীয়ের জন্মদিনে লর্ড ক্যানিং নাকি ভীম নাগের দোকান থেকে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছিলেন লেডিকেনি।
কেউ কেউ আবার বলেন, এই মিষ্টি ক্যানিং এর স্ত্রীয়ের জন্য প্রথম বানিয়েছিলেন রানাঘাটের হরিদাস পাল। এখন অবশ্য লেডিকেনি নামটার বদলী পান্তুয়া নামটাই বেশি জনপ্রিয়। লেডিকেনি মিস্তিতে কিন্তু সামান্য চোখে ধুলো দেওয়ার একটা গল্পও প্রচলিত। এই মিষ্টির বাইরের ভাজা আবরণ তো দেখতে লাল। লেডি ক্যানিং নাকি ভেবেছিলেন, ভেতরটাও লাল হবে, কিন্তু মিষ্টিতে কামড় বসাতেই বেরিয়ে এসেছিল সাদা ঘিয়ের পুর। তা দেখে নাকি হেসেই ফেলেছিলেন ক্যানিং-এর স্ত্রী।
এবার আসি, লেডি ক্যানিং এর জীবনের গল্পে। শার্লট ক্যানিং জন্মেছিলেন প্যারিসে, ১৮১৭ সালের ৩১ মার্চ । তার বাবা ফ্রান্সে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ছিলেন। । ১৮৩৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চার্লস ক্যানিংয়ের সাথে তার বিয়ে হয় । শার্লট, ১৮৪২-এ রানী ভিক্টোরিয়ার বেডচেম্বারের লেডি হিসাবে নিযুক্ত হন । তিনি রাজার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
১৮৫৭ সালে, ভারত যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন থেকে সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, চার্লস ক্যানিং ভারতের প্রথম ভাইসরয় হিসেবে নিযুক্ত হলেন, তার আগের বছর, ১৮৫৬ তেই ক্যানিং ভারতে এসেছিলেন স্ত্রী শার্লটকে নিয়ে।
ভাইসরয়ের স্ত্রী নিজেও কিন্তু দারুণ গুণী ছিলেন। ছবি আঁকতেন খুব ভাল। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ছিল তাঁর। ব্যারাকপুরের বাড়িতে তাঁর নিজের হাতে তইরি করা বাগান ছিল দেখবার মত। ১৮৬১ সালে শার্লট দার্জিলিং গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েই জাঙ্গল ফিভার অর্থাৎ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। শার্লটকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তখনও ম্যালেরিয়ার ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। লেডি ক্যানিংকে প্রথমে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, তাঁর প্রিয় শহর ব্যারাকপুরেই। পরে সমাধির ভাল দেখভালের জন্য অবশ্য কাউন্সিল হাউজ স্ট্রিটের সেন্ট জন'স চার্চ চত্বরে সমাধিটি নিয়ে আসা হয়।
জীবনসঙ্গী শার্লটের মৃত্যুতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেন ক্যানিং। মাস চারেকের মধ্যেই ভারত ছাড়লেন তিনি। ইংল্যান্ডের জীবন ছিল একাকিত্বে ঘেরা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে মৃত্যু হল ক্যানিং-এর। তাঁকে সমাধিস্থ করা হল ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে, স্ত্রীয়ের সমাধি থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে।