কথায় বলে শব্দ ব্রহ্ম। আবার সেই শব্দই যখন ন্যূনতম সহনশীলতা বেড়া টপকে যায়, তখন তা-ই হয়ে ওঠে বিরক্তির কারণ। সেই বিরক্তির লিস্টিতে গাড়ির হর্ন থেকে শুরু করে জোরে জোরে লাউডস্পিকার বাজানো পর্যন্ত কী নেই! কিন্তু, সামান্য নখের কামড়ের শব্দেই পাশের মানুষটা তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছেন, এমনটা দেখেছেন কখনও? যদি তাঁর সঙ্গে এটা বারবার ঘটতে দেখেন, তাহলে বুঝবেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্নায়ুর একটি বিশেষ সমস্যায় আক্রান্ত। যার নাম- মিসোফোনিয়া।
এটি মস্তিষ্কের এমন এক অসুখ, যেখানে সামান্য শব্দও কষ্টের কারণ হয়ে ওঠে। শুধু নখ কামড়ানোই নয়। মিসোফোনিয়ার রোগী শ্বাসের ওঠাপড়ার শব্দেও বিরক্ত হন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি, পাশে বসে কেউ জোরে শ্বাস নিলে বা কথা বললেও তাঁর কষ্ট হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এই কষ্টের পর শারীরিক কিছু সমস্যাও সৃষ্টিও হয়। অনেক সময় মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। শরীরে অস্বস্তি হয়, বমি ভাব থাকে। আর এর ফলেই, খুব স্বাভাবিকভাবেই, মিসোফোনিয়ার রোগীরা রাস্তায় বেরোতে ভয় পান। কারণ, যানবাহনের আওয়াজ, মানুষের কোলাহল তাঁরা নিতে পারেন না। গাড়ি যদি জোরে হর্ন বাজায়, সঙ্গে সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। শরীর খারাপ করতে শুরু করে।
মিসোফোনিয়াকে মানসিক রোগ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় না। তবে উদ্বেগ এবং প্রচণ্ড রাগের সঙ্গে এটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার কারণ, যে কোনও বিরক্তি উদ্রেককারী শব্দই একটি মানসিক অবস্থা এবং কিছু ক্ষেত্রে, একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে আক্রমণাত্মক, আতঙ্কিত বা বিরক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা রোগীর সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলি শিখিয়ে দেন। তবে এক দিনে এই কৌশল শিখে ফেলা সম্ভব নয়। নিয়মিত বেশ কিছু দিন থেরাপি চলার পর উন্নতির আশা করতে পারেন।
নিয়মিত ধ্যান, শরীরচর্চা, প্রাণায়াম- এই ধরনের সমস্যা দূর করতে পারে।