দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) এখন গোটাটাই থিম সর্বস্ব, তা বললে ভুল হবে । বনেদি বাড়ির পুজোগুলি কিন্তু আজও সমান জনপ্রিয় । দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এই বাড়িগুলির আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে অনেক গল্প,অজানা কাহিনী । সেরকমই এক অজানা কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে বালুরঘাটের সাহা বাড়ির পুজোয় (Balurghat Saha Bari Durga Puja)। যা মানুষকে আজও আকর্ষণ করে ।
দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বালুরঘাটের তিন নম্বর মোড় এলাকায় রয়েছে সাহাবাড়ি। প্রায় ১৮২ বছরের পুরনো সাহাবাড়ির পুজোয় (Saha Bari Durga Puja) আর আগের মতো জৌলুষ নেই ঠিকই । তবে, সব নিয়ম-কানুন মেনেই বছরের পর বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে এখানে । সাহা পরিবার ছিল পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশের বাসিন্দা। সেখান থেকে বনমালী সাহা ব্যবসার জন্য বালুরঘাটে আসতেন জলপথে । এখানে বাড়িও তৈরি করেন। তারপর থেকেই বনমালী সাহা এখানে পুজো শুরু করেন । এই বাড়ির পুজোয় একটা বিশেষত্ব হল প্রতিমার। আর পাঁচটা দুর্গা পুজোর থেকে সাহা বাড়ির দুর্গার মূর্তি একদম আলাদা।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2022 : 'স্ট্রবেরি লেগ' -এর সমস্যা রয়েছে ? পুজোর আগে সমাধান চান ? রইল টিপস
প্রথমদিকে প্রচলিত অবস্থানে থাকত প্রতিমা ।কিন্তু কয়েক বছর পরেই প্রতিমার ধাঁচে পরিবর্তন এসেছে । সাহা বাড়ির দুর্গা মূর্তিতে দেবীর স্থান অপরিবর্তিত থাকলেও গণেশ ও কার্তিকের স্থান পরিবর্তন করা হয়। সাধারণত, দেবী দুর্গার ডান দিকে গণেশ (Ganesh)আর বাঁদিকে কার্তিক থাকে । কিন্তু, সাহা বাড়িতে দুর্গার বাঁদিকে থাকে গণেশ, আর ডানদিকে কার্তিকের সহাবস্থান । এর পিছনেও একটা প্রচলিত কাহিনী রয়েছে । শোনা যায়,মৃৎশিল্পী নিয়ম অনুসারে দুর্গার বাঁ দিকে কার্তিক এবং ডান দিকে গণেশ বানিয়েছিলেন । কিন্তু পরদিন সকালে দেখা যায় দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর অবস্থান ঠিক থাকলেও কার্তিক ও গনেশের অবস্থান পাল্টে গিয়েছে। মৃৎশিল্পী আবার কার্তিক ও গণেশের অবস্থান ঠিক করে দেন । কিন্তু,পরদিন সকালে ফের কার্তিক ও গণেশের স্থান বদলে যায় । তারপর থেকে এইভাবে মায়ের পুজো হয়ে আসছে ।
এছাড়া, এখানে আরও একটা বিষয় হল, বছরের পর বছর ধরে একই কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি হয়ে আসছে। অর্থাৎ কাঠামোটির বয়সও ১৮২ বছর হতে চলেছে ৷ সাহা বাড়ির পুজোয় দেবীর ভোগেও থাকে বিশেষত্ব। ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় দুধের তৈরি নানা উপকরণ। সাহা বাড়ির সদস্য কালি কৃষ্ণ সাহা রায় বলেন, "বনমালী সাহা রায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর সময় থেকে যেভাবে মায়ের পুজো হয়ে আসছিল, এখন ঠিক একইভাবে মায়ের পুজো করা হয়। পুজোর সব দিন মাকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় । মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না । দশমীর দিনও বিশেষ নিয়ম মেনে পুজো করা হয় । পুজোর কয়েকদিন নিরামিষ খাওয়া হয়। বংশ পরম্পরায় পুরোহিত, মৃৎশিল্পী এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ।