স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পেরিয়ে গিয়েছে । কিন্তু, এতগুলি বছর পরে একটাই প্রশ্ন বারবার উঠছে, আমরা কি সত্যিই সবাই স্বাধীন ? ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে । তাহলে আজও সমাজে কেন এত বৈষম্য ? কত মানুষ প্রতিনিয়ত তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে । তাঁদের মধ্যে মনে হয় প্রথম দিকের সারিতে রয়েছেন ভারতীয় নারীরা । তা না হলে আর জি কর কিংবা হাথরসের মতো ঘটনা ঘটত না । সমাজের সেই বৈষম্যের ভাবনাই ফুটে উঠেছে অর্জুনপুরের দুর্গাপুজোর থিমে ।
এবার ৪৯ তম বছরে পদার্পণ করল অর্জুনপুর আমরা সবাই ক্লাব । প্রতি বছরই থিমে চমক থাকে । এবারও তার অন্যথা হয়নি । অর্জুনপুরের ক্লাবের পুজোর থিম অন্যদেশ । শিল্পী ভবতোষ সুতারের ভাবনায় সেজেছে মণ্ডপ । এক দেশের মধ্যেই 'অন্যদেশ'-এর হদিশ দিয়েছেন শিল্পী । যে দেশে রয়েছেন সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক থেকে রাতদখলের নারীরা । যেখানে সমান অধিকার থেকেও নেই । যেখানে কলুর বলদের মতো কোনও না কোনও জিনিসের পিছনে ছুটেই চলেছে । অস্থির সময়ে সংবিধানকে মনে করিয়ে দিয়েছেন শিল্পী । যে সংবিধান বলে চেতনার কথা, সমতার কথা ।
মণ্ডপে ঢুকলেই দেখা যাবে সমাজের ধাপে ধাপে বৈষম্যের প্রতীক একটি সিঁড়ি । তারপর প্যান্ডেলের ভিতর ঢুকলেই দেখা যাবে আস্ত একটা সংবিধান । মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদকে । যেখানে লেখা, 'রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান বা যে কোনও একটির ভিত্তিতে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না ।' চলছে লাইভ পারফরম্যান্সও । যার মাধ্যমে সংবিধানের বন্ধ জানলা খুলে চেতনা, সমতার বোধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা । এক অন্যদেশ-এ নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে ।
মণ্ডপ সজ্জায় সাদা-কালো রং-কে বেছে নেওয়া হয়েছে । ধূসর সময় বোঝাতেই ধূসর রং বেছে নেওয়া হয়েছে । এছাড়া, সংবিধানের সাদা পাতার কালো অক্ষরকে বোঝাতে ওই রং দু'টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে মণ্ডপ সজ্জায় । মণ্ডপে গেলে দেখা যাবে একটি বাইক প্রচুর মালপত্র নিয়ে ঘুরে চলেছে । ঠিক কলুর বলদের মতো । পরিবর্তন একটাই । বলদের জায়গায় এখন এসেছে যন্ত্র । যা বৈষম্যের প্রতীক ।
শিল্পী ভবতোষবাবুর জানিয়েছেন, সংবিধানের সাদা পাতার কালো অক্ষরে প্রত্যেকের অধিকার লিপিবদ্ধ থাকলেও আজও সবাই কলুর জোয়াল কাঁধে টেনে ঘুরেই চলেছে ঘাম-রক্তের চেনা বৃত্তে। অনেকের দীর্ঘশ্বাসেই তৈরি হয়েছে এক দেশের ভেতরে অন্য দেশ, অনেক দেশ।