বনেদিয়ানা, ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বংশগৌরব- এমনই নানা কিছুর সংমিশ্রণে ঝলসে ওঠে উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো। দুর্দান্ত সব বাড়ি, তাদের বহু শতাব্দীর সমৃদ্ধ ইতিহাস, বিরাট সমারোহ, সঙ্গে আন্তরিকতা৷ এই না হলে উত্তরের বাড়ির পুজো! ঝাড়বাতির আলোয়, বিরাট প্রাসাদজুড়ে আলোকসজ্জায় হাজার হাজার দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে এই পুজোগুলি।
কিন্তু যে সব বাড়িতে এসব কিছুই নেই, সেখানেও তো মা আসেন। ভাঙা দেওয়াল ছুঁয়ে, 'বিপজ্জনক বাড়ি' লেখা বোর্ড পেরিয়ে, টলমলে কড়িকাঠের নিচে মায়ের অধিষ্ঠান। টিমটিমে আলোর বৃত্তে অসুরদলনী মা দুর্গা যেন উত্তর কলকাতার সেই সাবেকি বাড়ির মেয়ে, সমৃদ্ধি যাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে বহুকাল।
সেরকমই এক বাড়ি হল আহিরীটোলার কামিনী মণি দাসীর বাড়ির পুজো। বাড়িতে ঢোকার মুখ অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে। ঠাকুর দালানে প্রতিমার উচ্চতা বড় জোর একফুট। দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়েছে একাধিক জায়গায়। ছাদ ফুটো, শ্যাওলা ধরা, টপ টপ করে জল পড়ে ক্রমে পিছল হয়ে উঠছে চারপাশ। জাঁকজমকহীন পুজোয় ভিড় করছে না কেউ।
ঠাকুর দালানে প্রতিমার পায়ের কাছে বসে এক-দুই প্রৌঢ়া-পুরোহিত মশাই, হারানো সময়ের গল্প কানে আসছে টুকটাক। থিম পুজোর ভিড়ে কোনও আড়ম্বর নেই, আড়ম্বরের সামর্থও নেই এই পুজোর। ইতিহাসে এ বাড়ির কথা নেই, তাতে কী? বাড়িটাই তো ইতিহাস! ক্ষয়ে আসা সময়ের গা থেকে সরে গেছে চুনকাম, বেরিয়ে পড়েছে জরা জীর্ণ হাড় জিরজিরে এক সময়ের চিহ্ন। এখনও পালা করে পুজো হয়। কদিন হবে, কেউ বলতে পারে না। এ ভাবে একটা সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আরেক সময়ের বুকে... কালের নিয়মে।