এক বৈশাখে দেখা হল দু'জনার, জষ্ঠিতে হল পরিচয়, আসছে আষাঢ় মাস, মন তাই ভাবছে, কী হয় কী হয়, কে জানে কী হয়! ঠিক এরকম কী হয় কী হয় ভাব হত, তবে আজ থেকে ৩/৪ দশক আগে। কালের নিয়মে কত কিছু বদলেছে, প্রেমের ধরণই বা বদলাবে না কেন? রিলেশনশিপ বা কোর্টশিপ নয়, জেন Z এখন ভরসা রাখছে সিচুয়েশনশিপে।
কী এই সিচুয়েশনশিপ? নাহ, নির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা নেই। মানে, কোন কোন বক্সে টিক করলে বলা যাবে আপনি সিচুয়েশনশিপে আছেন, এমনও কোনও ছক বাঁধা নিয়ম নেই। তাহলে?
সিচুয়েশনশিপ খানিকটা কুয়াশার মতো, শুধু মেঘ বলা যাবে না, আবার বৃষ্টিও না। অর্থাৎ প্রেম বা প্রেমের মতো একটা টান, ভাল লাগা, অনুভূতি আছে, অথচ সম্পর্ককে নাম দিতে রাজি নন দু'জন। সিলমোহর দিচ্ছেন না সম্পর্ককে। তবে জীবনে বন্ধুর চেয়ে সামান্য হলেও বেশি কিছু বলে ডাকা যায়, এমন কারোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
প্রেম আছে, প্রেমের তকমা নেই, তাই সমাজের নানা প্রত্যাশা পূরণের চাপ নেই। যার সঙ্গে সিচুয়েশনশিপে আছেন, তাকে প্রতিশ্রুতি দিতেও হচ্ছে না। আজ আছেন মানে, কালও থাকবেন, এতটুকু আশ্বাসের দরকারও পড়ছে না, তাই সিচুয়েশনশিপ।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে তরুণ তরুণী অনেক সময়েই নিজের শহর থেকে দূরে কোথাও গিয়ে চাকরি করেন, সে সময় জীবনে নিঃসঙ্গতা কাটাতে একটা মানুষের প্রয়োজন হতেই পারে। এরকম দুজন মানুষ কাছাকাছি এলে, এবং ভবিষ্যতের কথা ভুলেই অন্তরঙ্গতা বাড়ালে খুব সহজেই সেটাকে বলা যায় সিচুয়েশনশিপ। সেই সময়টা, তখনকার ঘনিষ্ঠতা অস্বীকার না করেই কিন্তু দুজনে চাইলেই আলাদা হতে পারেন, এ যেন লেখাই থাকে সিচুয়েশনশিপের ব্যকরণ বইতে।
প্রেম ছিল, সম্পর্ক ছিল, লিভ ইন রিলেশনশিপেও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল সমাজ, আনকোরা একটা নতুন নামের দরকার কী পড়েছিল? কারণ কমিটমেন্ট ফোবিয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে। যে কোনও প্রতিশ্রুতিকেই বাড়তি ভার মনে করছে এই প্রজন্ম। লিভ-ইন সম্পর্কেও এসে পড়ছে প্রত্যাশা, পূরণ করতে না পারলেই ব্রেকআপ। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙা নিয়ে আজও এত ট্যাবু! না এক্ষেত্রে সমাজের চেয়েও সম্পর্কে থাকা দু'টো মানুষের মানসিক ক্ষয়টাই বেশি। সম্পর্ক ভেঙেছে, এই ভাবনাটা থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চ্যালেঞ্জটা এ ক্ষেত্রে বেশি। কিন্তু সিচুয়েশনশিপে বরং অনেক সহজে নিজেকে বোঝানো যায়, দু'জনের একসঙ্গে সফরসময় এটুকুই ছিল, বাকি পথটুকু যেতে হবে আলাদা আলাদা।
অনলাইন ডেটিং-এর জমানায় কমিটমেন্টের সংজ্ঞাও বড় কঠিন। মুঠোফোনে দুটো রাইট সোইয়াপের মাঝে যত মিনিটের ব্যবধান, কমিটমেন্টের মেয়াদও ততক্ষণের।
আধুনিক সময়ে প্রাকবিবাহ যৌনতা নিয়ে ছুৎমার্গ কমে এসেছে। অকারণ ফিসফাসের চলও নেই। এসব কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিচুয়েশনশিপের ধারণা। সম্পর্ক আছেও, আবার নেইও। এই প্রজন্মকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আরও স্পষ্ট, সম্পর্কের যা কিছু ভাল, তা আছে, দায়িত্ব বা অন্য যা সব দমবন্ধ করা বাড়তি চাপ, সে সবের বালাই নেই। কেউ কেউ বলছেন, এই সম্পর্কে স্বাধীনতা অনেক বেশি। তবে আসল কথা হল, ভালোবাসা, প্রেম, স্নেহ, জীবনের যে কোনও মৌলিক অনুভূতিই সুন্দর, সব ফর্মেই সুন্দর। রিলেশনশিপেও, সিচুয়েশনশিপেও। সময়ের নিয়মে অনুভূতির নাম বদলে যায় শুধু, বদলায় না অনুভূতির নির্যাস।