মেয়েদের টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের স্বপ্নভঙ্গ। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেন হরমনপ্ৰীতরা। রবিবার দুবাইতে মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। শেষ হাসি হাসল অজিরা। আর যে দেশে, ক্রিকেট বললে মাথায় শুধুই আসে বিরাট কোহলি কিমবা রোহিত শর্মা-হার্দিক পান্ডিয়াদের নাম, সেখানে হরমনপ্রীত বা শেফালিদের হাহাকারে ছিছিকার পড়তে সময় লাগে কয়েক মুহুর্তের। এ দেশে বিরাট-রাহুলদের হারে আগে দেশবাসীর মন খারাপ হয়, কাগজে সমালোচনা হয়। কিন্তু স্মৃতি-শেফালীদের ঝুলিতে জয় না এলে প্রথমেই যেটা হয়, তা হল ট্রোল। এবারও হয়েছে।
টুইটারে একটি মিম ঘুরছে, ভারতের মহিলা ক্রিকেট টিম টি ২০ বিশ্বকাপে হেরেছে, তাই রীচা, শ্রেয়াঙ্কা, অরুন্ধতীদের রান্নাঘরে ফিরতে বলা হয়েছে। ট্রোলাররা মনে করছেন, ওটাই ওদের আদর্শ জায়গা।
হ্যাঁ, এ দেশের খেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট, সবচেয়ে বেশি গ্ল্যামারও ক্রিকেটের। এটুকু বললে পুরোটা বলা হয়না। জনপ্রিয়তা, গ্ল্যামার এসবই পুরুষদের ক্রিকেটে। মহিলাদের ক্রিকেট এখনও অবহেলিত। টি ২০ বিশ্বকাপ যে চলছে, সে খবর রাখেন না বহু ক্রিকেটপ্রেমীও। যেহেতু খেলাটা মেয়েদের, সে কারণেই মূলত। কারণ, সমাজটা এখনও পুরুষতান্ত্রিক। এই সমাজেই বিরাট-রোহিতদের ফর্ম খারাপ থাকলে তাঁর দায় পড়ে গিয়ে অনুষ্কাদের ওপর। শুধু যে সাধারণ মানুষ বেলাগাম মন্তব্য করে বসেন, তা তো নয়। দেশের কিংবদন্তি ক্রিকেট ব্যক্তিত্বরাও এমন অনেক বিতর্কিত করেছেন সাম্প্রতিক অতীতেও।
শুধু কি ক্রিকেট? সব খেলাতেই লিঙ্গ বৈষম্য প্রকট। আধুনিক অলিম্পিকের স্রষ্টা ব্যারন পিয়েরে ডি কুবার্টিন চেয়েছিলেন, মেয়েরা যেন কোনওমতেই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ না করেন৷ মেয়েদের অংশগ্রহণ ধ্বংস করবে অলিম্পিকের নান্দিকতাকে, এমনটা ছিল তাঁর মত।অলিম্পিকের স্রষ্টার এমন নারীবিদ্বেষী উক্তির পর কেটে গিয়েছে একটা গোটা শতাব্দী। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়েছে অলিম্পিক। নারীমুক্তির আন্দোলনও পেরিয়েছে পিতৃতান্ত্রের অসংখ্য পাহাড় -মরুভূমি। অবশেষে লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে ইতিহাস তৈরি করেছে ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক। এই প্রথম অলিম্পিকের অর্ধেক আকাশ জুড়ে বিচরণ করলেন মেয়েরা। প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই মহিলা ছিলেন।
লিঙ্গসমতার পক্ষে বহু যুগান্তকারী পদক্ষেপ করেছিল এবারের প্যারিস অলিম্পিক। অ্যাথলিট মায়েদের জন্য ছিল স্তন্যপান করানোর ঘর, ছিল নার্সারি। সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মাঠে ফেরাতে কার্পণ্য করেনি প্যারিস অলিম্পিক। ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে এই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন অলিম্পিকের কর্তারা।
এ তো গেল খেলার জগতের কথা। লিঙ্গ বৈষম্য কি কেবল সমাজের একটা স্তরে। আমাদের এই বাংলায় চলা, কলকাতায় চলা আরজি কর আন্দোলন, বুঝিয়ে দিয়েছে এই ২০২৪-এ দাঁড়িয়েও মহিলা এবং প্রান্তিক যৌনতার মানুষের লড়াইটা অসম। তাঁদের জন্য পথ এখনও বন্ধুর, এবড়ো খেবড়ো। একদিকে সুনীতা উইলিয়ামসরা, কল্পনা চাওলারা আক্ষরিক অর্থেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখান, অন্যদিকে, একই পৃথিবীর কোনও কোনায় কন্যাভ্রুণ হত্যা হয়। মেয়েদের স্বপ্নের গলা টিপে দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে থাকা মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষিত এবং খুন হতে হয়। রাতে রাস্তায় নিরাপত্তার জন্যেও মেয়েদের, LGBTQ সম্প্রদায়ের মানুষকে আলাদা করে 'রাত দখলের' আন্দোলন করতে হয়। এটাই সত্যি!