গান অনেকের কাছেই বেঁচে থাকার রসদ। সুখ দুঃখের সাথী তো বটেই। এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারও বলবেন কেউ কেউ। জীবনের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলা কত মানুষকে বাঁচতে, ঘুরে দাঁড়াতে শিখিয়েছে গান। সেই গানই কিন্তু মনে মৃত্যু চিন্তা ডেকে আনে? এও সম্ভব? হ্যাঁ এই পৃথিবীতেই এমন গান আছে, যা মানুষের আত্মহত্যার কারণ হয়ে ওঠে। উঠেছে অতীতে। কী সেই গান, জানেন? আজ গল্প শোনাব সেই সুইসাইডাল সং-এর।
গানের নাম 'গ্লুমি সানডে'। হাঙ্গেরির গান, প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে। প্রথমে গানের কথা একটু অন্যরকম ছিল, পরে যে ভার্সানটি জনপ্রিয় হয়, সেখানে এক যুবতী আত্মহত্যার কথা বলছেন, কারণ তাঁর প্রেমিকের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৩৫ সালে এই ভার্সান শোনা গেল শিল্পী পাল কালমারের গলায়।
ইংরেজিতে গ্লুমি সানডে ১৯৩৬ সালে রেকর্ড করেন পল রবসন। হাঙ্গিরেতে যখন ফ্যাসিজমের দাপট, সেই সময়ে গানটি রচনা করেছিলেন রেজোস সেরেস। মূলত যুদ্ধ পীড়িত সময়ের বিষণ্ণতা ধরা পড়ে গানের কথায় সুরে। ১৯৪১ এ শিল্পী বিলি হলিডে এই গানকে দারুন জনপ্রিয় করে তোলেন। এই গানকে ঘিরে রয়েছে হাজারো মিথ। অনেকেই বলেন গানের কথায় এমন কিছু আছে, যা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়।
পাল ক্যামারের রেকর্ডিং প্রকাশিত হওয়ার পরই হাঙ্গেরিতে পর পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। হাঙ্গেরি-আমেরিকা মিলিয়ে সেই সময় পর পর ১৯ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। গানটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কেউ সুইসাইড নোটে লিখে রেখে যান গ্লুমি সানডে গানের কথা। কেউ বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও হাতে ধরা থাকে গ্লুমি সানডে গানের রেকর্ড।
৪০ এর দশকে বিবিসিও গানটির কথা শোনানো বন্ধ করে শুধুমাত্র ইন্সট্রুমেন্টাল বাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, আত্মহত্যার প্ররোচনা না থাকলেও এই গানটি কাউকে যুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু ২০০২ সালে এসে গানটির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রেডিও চ্যানেলগুলো।
গানটি প্রকাশের পর সেরেসের প্রাক্তন স্ত্রীও আত্মহত্যা করেন। ১৯৬৮ সালে গানটি প্রকাশের প্রায় ৩৫ বছর পর রেজো সেরেসও বুদাপেস্টে একটি বাড়ির জানালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেন কিন্তু তিনি বেচেঁ যান। পরবর্তীতে একটি হাসপাতালে তিনি গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।