ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বয়কট করেছিলেন বিলিতি কাপড়। শুরু হয়েছিল দেশজ কাপড় পরার চল। স্বদেশী আন্দলনের পথ পেরিয়ে স্বাধীনতা এল, আজ সেই স্বাধীনতাও পচাত্তুরে বুড়ো। স্বাধীন দেশের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা আঙ্গিকেই আসছে আধুনিকতা। সমকালের ফ্যাশন কিন্তু পুরনোকে বাতিল করেনি, একটু সময়োপযোগী করে নিয়েছে শুধু। আজ সেই আধুনিক সময়ের ফ্যাশনের ধারা নিয়েই কথা হবে।
প্রথমেই এডিটরজি বাংলার টিম পৌঁছে গেলাম হিন্দুস্থান পার্কের 'মেড ইন বেঙ্গল'-এ। কথা হল কর্ণধার মিরান্ডা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর। স্বদেশী আন্দোলন থেকেই শুরু হয়েছিল বিদেশি কাপড় বর্জন করে স্বদেশী কাপড় ব্যবহারের চল। এখন তো সেটা ট্রেন্ডিং! কী বলবেন?
ট্রেন্ডিং তো বটেই! আরো বেশি বেশি করে খাদির চল বাড়ছে৷ কলকাতা তো ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে এতজন ফ্যাশন ডিজাইনার আছেন, তাঁরা আরো জনপ্রিয় করে তুলছেন খাদিকে। এখন এখানে সিল্ক আর সুতি- এই দু'টি নিয়েই সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে।
স্বদেশী আন্দোলনের সময় খাদি জনপ্রিয় হয়েছিল। খাদি আসলে ঠিক কী, তা নিয়ে কিন্তু বিভ্রান্তি আছে৷ চরকায় সুতো তৈরি করে সেই সুতোয় যখন বুনন হবে, সেটা খাদি। হ্যান্ডলুমের অন্য প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সুতো তৈরির মাকু থাকে৷ তাতে বিষয়টা আরেকটু সহজ হয়৷ তবে খাদি বা সুতির বিকল্প নেই। একটা ডেনিম জিনস হয়তো খুব স্টাইলিশ হবে, কিন্তু খাদি ও সুতির মতে আরাম একেবারেই দেবে না।
খাদি তো পরিবেশবান্ধবও বটে, তাই না?
একশোবার৷ অবশ্যই। আপনি এই সব কাপড় পুড়িয়ে দিন, ছাই হয়ে যাবে মাটিতে মিশে যায়। কিন্তু এর সঙ্গে যদি অন্য কিছু মেশানো হয়, তাহলেই মুশকিল। তখন আর বিষয়টা পরিবেশবান্ধব থাকে না। পিওর কটন বা পিওর সিল্ক ১০০% বায়োডিগ্রেডেবল।
আড্ডা শেষে যখন বুটিকের বাইরে পা রেখেছি, গরিয়াহাটে তখন বিকেল হচ্ছে। সামনেই উৎসবের মরশুম। ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। পৌঁছে গেলাম আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য, খাদি এম্পোরিয়ামে। কথা হল। পত্রালী ভৌমিক দাসের সঙ্গে।
ফ্যাশনে খাদি এখন ঠিক কতটা জনপ্রিয়? জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে?
জনপ্রিয়তা যে বাড়ছে, তা নিয়ে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। এর মতো কমফোর্টেবল পোশাক, বিশেষ করে কলকাতার আবহাওয়ায়, আর কিছু নেই।
মাঝে ওয়েস্টার্ন আউটফিট ট্রেন্ডিং ছিল, তারপর কী করে সেই জায়গাটা খাদি নিল?
আগে খাদির পোশাক একটা বিশেষ রকমেরই হতো৷ এখন ফ্যাশন ডিজাইনাররা নানা রকমের খাদির পোশাক তৈরি করছেন। বৈচিত্র্য আসছে৷ সব মিলিয়ে খাদি এখন নতুন প্রজন্মের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
মূলত সুতির কাপড়। সেই সঙ্গে তসর, র সিল্ক, মটকা দারুণ চলে। আগে তো শুধু শাড়ি বা কুর্তি তৈরি হত, এখন নানা রকম ড্রেস, ট্রাউজার্স পালাজো সবই খাদির কাপড়ে তৈরি হচ্ছে।
খাদি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কী করে সাহায্য করে?
ভীষণ ভাবে! এ তো আমাদের নিজস্ব জিনিস। বিদেশীরাও প্রচুর খাদির জিনিস কেনেন, কাপড় কিনে নিয়ে যান, এতে অর্থনীতি নিঃসন্দেহে লাভবান হয়।