ইট, কাঠ, পাথরের শহরে পলাশ কই? তবু এই দিনটায় মনে পলাশের ছবি ভেসে উঠবে না, তা হয়? সরস্বতী পুজো বলে কথা! রাত থাকতে উঠে পড়ে আলপনা দেওয়া, ফল মূল কেটে থালায় সাজিয়ে রাখা, বাঙালি বাড়িতে এসব বড় চেনা ছবি। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে একেবারে জড়িয়ে থাকা।
আজ অনেক বাড়িতে জোড়া ইলিশ খাওয়ারও দিন বটে।
আমাদের সরস্বতী পুজো, আর সারা ভারতের নানা প্রান্তে বসন্ত পঞ্চমী। উত্তর ভারতে বসন্ত পঞ্চমীর দিন হলুদ পরা নিয়ম, আমাদের সরস্বতী পুজোর মতোই। এমনকি জাফরান দিয়ে হলুদ করে দেওয়া হয় পোলাও, দুধ, বা মিষ্টিও। বিভিন্ন মন্দির সেজে ওঠে হলুদ ফুলে। শীত শেষ হয়ে বসন্ত আসার এই সময় আসলে ফসল রোপনের সময়। তারই প্রতীক হলুদ, বাসন্তী।
উত্তর ভারতে, প্রধানত পাঞ্জাবে, পূজিতা হন মা গঙ্গা, সরস্বতী নন। এই নামে দুই নদীর সঙ্গে মিল লক্ষ্য করুন। অনেকে গঙ্গা, যমুনা, এবং বিলুপ্ত সরস্বতী নদীর ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করেন আজকের দিনে। পাঞ্জাবে এই একই দিনে হয় ঘুড়ি উৎসব। রাজস্থানে এই দিনে জুঁই ফুলের মালা পরার চল। মহারাষ্ট্রে আবার বসন্ত পঞ্চমীতে নব্দম্পতিরা তাঁদের বিয়ের পর প্রথমবার একসঙ্গে মন্দিরে যান প্রার্থনা করতে।
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজো আসলে বাঙালির প্রেমদিবস, বিদ্যেধরীদের হলুদ শাড়ি পরার দিন, মিঠে কানাকানির দিন
এ শুধু হিন্দুদের উৎসব ভাবলে ভুল করবেন। ইতিহাস বলে, দ্বাদশ শতাব্দী থেকে বসন্ত পঞ্চমী পালন করে আসছেন সুফিরাও। কথিত আছে, কিংবদন্তী কবি আমির খুসরো এই দিনে হলুদ পরতেন, বিষণ্ণ চিস্তি সন্ত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মন ভালো করতে।
দক্ষিণ ভারতে তাঁর পূজা হয় আশ্বিন মাসে, নবরাত্রির শেষ দিনে।
উৎসব আসলে মানুষকে কাছে কাছে নিয়ে আসার দিন। এই যে সারাদেশ জুড়ে নানা লোকাচার, সবের পেছনেই কিন্তু একটাই সুর, লেগে লেগে থেকে জীবন উদযাপন।